সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চার দিনব্যাপী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “গত এক মাসে কিছু মানুষের সৃষ্টি করা দুর্যোগের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ এই দুর্যোগ আমরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব।
“বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থা এমন, এখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগও যেমন মোকাবেলা করতে হয়, তেমনি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও মোকাবেলা করতে হয়।”
কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কারো আমি গিবত গাইতে চাই না। কারো কথা বলতে চাই না। যারা দেশের উন্নয়ন চোখে দেখেন না, চোখ থাকতেও যারা অন্ধ, যারা দেশকে উন্নয়নের পথ থেকে তুলে অন্ধকারে ঠেলে দিতে চান, দেশবাসী তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
“আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা কোনো আন্দোলন হতে পারে না। এমন অমানবিক কাজ কোনো মানুষ করতে পারে, তা বিশ্বাস হয় না। যারা এমন করছে, তারা দেশের শত্রু, মানবতার শত্রু।”
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও অনুষ্ঠানে ছিলেন।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলায় ২৫টি দেশের ৮৫ জন বিদেশি বক্তা ২৪টি সেমিনার, নয়টি কনফারেন্স এবং ১১টি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের মেধার অভাব নেই। শুধু মেধা বিকাশের দরকার। বর্মান সরকার শুধু মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিচ্ছে।
“আমরা চাই, প্রযুক্তি ব্যবহার ব্যাপকহারে বিস্তার লাভ করুক। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে প্রযুক্তি বিভেদ মুক্ত দেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।”
সরকার ই-গভর্নেন্স অনেকটাই বাস্তবায়ন করে ফেলেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
“তাই আমরা কম্পিউটারের পাশাপাশি মোবাইল ফোন, বেতার, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেটের মতো মাধ্যমের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।”
বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়নে আইসিটি দক্ষ জনবলের প্রয়োজন মেটাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৪ হাজার জনবলকে তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬৫টি প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা গ্রহণ করেছে।
“আমরা ২০১৮ সাল নাগাদ ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় এবং জিডিপিতে সফটওয়্যার ও সেবাখাতের অবদান ১% এ উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।”
হাইটেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি জেলায় ক্রমান্বয়ে এই অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।
তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার ও বেসিসের সভাপতি শামীম আহসানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
কংগ্রেস অধিবেশনের কারণে এই প্রযুক্তি মেলায় আসতে না পারায় আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির কংগ্রেসম্যান মাইক হোন্ডার একটি ভিডিওবার্তা অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়।
আইসিটি খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরতে ‘এখানেই ভবিষ্যৎ’ স্লোগানে ৯ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি চলবে এই মেলা।
এবার প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স হচ্ছে। আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার (আইটিইউ) সেক্রেটারি জেনারেল হাওলিন ঝাও মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন।
এছাড়া , নেপালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী ড. মিনেন্দ্র প্রসাদ রিজা ও ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী ডি এন ডানগাযেল মেলায় অংশ নেবেন।
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে ২৫টি দেশের ৮৫ জন বিদেশি বক্তা অংশ নেবেন। তারা ২৪টি সেমিনার, নয়টি কনফারেন্স এবং ১১টি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেবেন।
ফেইসবুক এশিয়া প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চলের পরিচালক আখি দাস এবং গুগলসহ কয়েকটি বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও মেলার বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নেবেন।