প্রতি বছরের মতো এবারও ১ ফেব্রুয়ারি রোববার বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন’ উদ্বোধন করেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এই মেলা উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যটাই খারাপ। যখনই তাদের সামনে উন্নত জীবনের সুযোগ আসে, কোথা থেকে যেন কালো মেঘ এসে সব ঢেকে দেয়।
“গত এক বছর দেশ শান্তিতে এগিয়ে যাচ্ছিল। যে পাঁচটি দেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে রয়েছে, বাংলাদেশ তাদের একটি। কিন্তু যখনই সম্ভাবনার দুয়ার খোলে তখনই আঘাত আসে।”
“কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ পরাজয় মানবে না,” বলেন শেখ হাসিনা।
বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ ও হরতালে সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “হাসপাতালগুলোর বার্ন ইউনিট মানুষের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে। কেন এমন অবস্থা হল এখনও আমার বোধগম্য নয়।
“কেউ যদি তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন, তার দায় জনগণের ওপরে কেন চাপাতে হবে। এই মানুষগুলোর কি অপরাধ যে তাদের পুড়িয়ে মারতে হবে।”
এসএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছিলাম। প্রতি বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের কাছে বই পৌঁছে দেওয়া শুরু হয়েছে। সময়মতো পরীক্ষা নেওয়া, ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে, যেন তাদের শিক্ষাজীবন নির্বিঘ্ন হয়। এ সময় হরতাল দিয়ে তাদের গতিরোধক করার চেষ্টা চলছে।”
হরতাল-অবরোধে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে সরকার প্রধান বলেন, “আমরা সোমবারের পরীক্ষা পিছিয়ে শুক্রবারে নিয়েছি, কারণ আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। যারা সহিংসতা করছে তারা মানুষ না, তারা শিশুদেরও পরোয়া করে না।”
এবারই প্রথম বইমেলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন করছে বাংলা একাডেমি। এতে ১২টি দেশের ৪৮ জন সাহিত্যিক অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর মেলার কয়েকটি স্টল ঘুরে দেখেন। সাহিত্য সম্মেলনে আসা বিদেশি লেখকরাও তার সঙ্গে ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সচিব রনজিত কুমার বিশ্বাস, বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
জার্মান লেখক হ্যান্স হার্ডার, ফ্রান্সের ফ্রান্স ভট্টাচার্য, বেলজিয়ামের ফাদার পল দুতিয়ান ও ভারতের পবিত্র সরকার বাংলায় আলোচনায় অংশ নিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন।
অনুষ্ঠানে এবারের বাংলা একাডেমি পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
এবার বইয়ের স্টল বসেছে ৫৬৫টি, মোট ৩৫১টি প্রতিষ্ঠানকে তাদের বই নিয়ে আসছে মেলায়। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১২৮টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৫৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৪৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমিসহ মোট ১১টি প্রতিষ্ঠানকে ৪০০ বর্গফুটের প্যাভিলিয়ন দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অনুষ্ঠিত মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দাসংস্থাগুলো। মেলা প্রাঙ্গণে ৭৫টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থাকবে।
মেলা প্রতিদিনি বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা, ছুটির দিন ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
এছাড়া চারদিন শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হচ্ছে। নজরুল মঞ্চ ঘিরে নির্মিত শিশুকর্নারে থাককে শিশু-কিশোর বিষয়ক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল।