‘জ্বালাও পোড়াও বন্ধ ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের দাবিতে’ শনিবার বিকালে উদীচী চট্টগ্রাম, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর, ছাত্র ইউনিয়ন ও যুব ইউনিয়ন মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে উদীচী কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ডা. চন্দন দাশ বলেন, অহিংস উপায়ে মত প্রকাশের পথ বন্ধ হয়ে গেলে জনগণও সহিংস হয়ে উঠতে পারে।
২০ দলীয় জোটের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “কর্মীবাহিনী নিয়ে রাজপথে কর্মসূচি পালনের শক্তি কি আপনাদের নেই? সেই শক্তি যদি না থাকে তবে প্রমাণ হয় আপনাদের দাবি অন্তঃসার শূণ্য।
“যারা আপনাদের দাবির বিরোধিতা করছে তারা কি সাধারণ মানুষ? তাহলে কেন সাধারণ মানুষকে পুড়ে মরতে হবে? জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। কোনোভাবে সাধারণ মানুষ নিজেদের মত প্রকাশ করতে না পারলে তারা সহিংস হয়ে উঠতে পারে।”
“জনগণ ও গণতন্ত্রের কথা বলে তারা দেশের মালিক জনগণকেই হত্যা করছে। এ হত্যাযজ্ঞকে গণতন্ত্র বলা যায় না।”
তিনি বলেন, জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। এর জন্য প্রয়োজনীয় সব ক্ষমতা সরকারের আছে। ব্যবস্থা না নিলে জনগণ সরকারকেই দায়ী করবে।
“সরকার যে গণতন্ত্রের চর্চা করছে তা ত্রুটিপূর্ণ। এতে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।”
সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান বলেন, দাবি আদায়ের অপকৌশল হিসেবে জনগণের ওপর নির্যাতন চলছে। আন্দোলনের নামের জনগণ পুড়ে মরবে আর সরকার চেয়ে থাকবে এটা হতে পারে না। সরকারকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে।
সমাবেশে কবি-সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, কোনো মৃত্যুই উল্লাসের নয়। বিএনপি নেত্রীকে বলতে চাই, মানুষ হত্যার রাজনীতি বন্ধ করুন। অন্যথায় প্রকৃতির প্রতিশোধ নিয়মানুযায়ী ঘটবে।
উদীচী সহ-সম্পাদক জয় সেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সহ-সভাপতি সুনীল ধর, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি নাথ, আবৃতি শিল্পী পঞ্চানন চৌধুরী, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তরুণ উদ্যোগের পক্ষে মিন্টু চৌধুরী, ঘাতক দালাল নিমূর্ল কমিটির শওকত বাঙ্গালী, শিক্ষিকা সালমা জাহান মিলি প্রমুখ।
এদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা নির্মূলে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিম্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে চবি শিক্ষকরা এ আহবান জানান।
সমাবেশে চবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, পাঁচ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে সাধারণ মানুষের উপর পেট্রল বোমা হামলার মাধ্যমে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে তা কোন ভাবেই রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে পারে না।
“এ হামলা প্রতিরোধে শুধু সরকারি পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। এগিয়ে আসতে হবে আমাদেরও।”
এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান উপাচার্য।
চবি শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক কামরুল হাসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমরান হোসেন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাইন বিল্লাহ, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌরেন বিশ্বাস, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহ আলম, সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুর রউফ, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আমাতুল লায়লা জামান, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুকান্ত ভট্টাচার্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফরিদুল আলম, পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মো. মহসীন প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে উপস্থিত শিক্ষকরা বিভিন্ন অনুষদে ঘুরে র্যালি করেন। মানবন্ধনে সংহতি জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন ও সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী।