চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শিক্ষার্থী তাপস সরকার খুনের জন্য তার হল নিয়ন্ত্রণকারী সিএফসি গ্রুপকে দুষছে তাদের প্রতিপক্ষ, যদিও পুলিশের তদন্তে ভিএক্স গ্রুপের কর্মীদের দিকেই দৃষ্টি রয়েছে।
Published : 17 Dec 2014, 06:52 PM
তাপস খুনের ঘটনা নিয়ে বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক গ্রুপ ভিএক্সের কয়েক কর্মী। ছয় দফা দাবি দিয়ে আগামী শনিবারের মধ্যে তা পূরণ না হলে রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধের হুমকি দিয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভিএক্স কর্মী মোহাইমিনুল হক ফয়সাল। তার সঙ্গে এই গ্রুপের কর্মী রনি সেন, অশরাফুল হক বাবলু, শাহজালাল শিমুল ও মিজানুর রহমান ছিলেন।
ফয়সাল বলেন, “তাপস সরকারের অকাল মৃত্যুর শোক নিহতের পরিবার ও ছাত্রলীগ কখনো মন থেকে মুছে ফেলতে পারবে না। ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া অনুশোচনার কোনো ভাষা নেই।
“কিন্তু তার লাশ নিয়ে যে অপরাজনীতি হচ্ছে তা আমাদের লজ্জিত করে। তাপসের মূল হত্যাকারী ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে।”
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের জেরে তাপসকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সিএফসির নেতা রাকিব হোসেনই তাপস সরকারকে হত্যা করে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
“সিএফসির নেতা অমিত কুমার বসু, সুমন মামুন ও শাহদাত হোসেন জুয়েলের ছাত্রত্ব নেই। তারা ক্যাম্পাসে খুনের রাজনীতি চালু করেছে। নিজেরা খুন করে যারা প্রকৃত ছাত্রলীগ করে তাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
এই হত্যাকাণ্ডে ভিএক্স গ্রুপের নেতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির উপ-সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ঠিক নয়-দাবি করে ফয়সাল বলেন,“বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, ছাত্রলীগের ভিএক্স’র নেতা আশরাফুজ্জামান আশার গুলিতেই নাকি তাপস নিহত হয়েছে। ফরেনসিক প্রতিবেদনে বলা হয়, নাইন এমএম পিস্তলের দুটি বুলেট তার বুকে বিদ্ধ হয়।
“আমাদের প্রশ্ন হলো- আদৌ শাহজালাল হল থেকে নাইন এম এম পিস্তলের কোনো গুলি ছোড়া হয়েছে কি না। শাহজালাল হল থেকে যদি গুলি ছোড়া হয় তাহলে একশ মিটার দূরে শাহ আমানত হলের তৃতীয় তলায় তাপসের বুকে একটির পর আরেকটি বুলেট কীভাবে লাগল?”
এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনও তাদের প্রতিপক্ষ সিএফসি গ্রুপের সমর্থনে কাজ করছে দাবি করে মোহাইমিনুল বলেন, “হাটহাজারী থানার ওসি মো. ইসমাইল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভিএক্স কর্মীদের ওপর হামলায় সাহায্য করেছে।
“একজন ওসি কোনো তদন্ত ছাড়াই কী করে বলেন, আশরাফুজ্জামান আশা গুলি করে তাপসকে খুন করেছে।”
তাপস হত্যার সুষ্ঠু তদন্তসহ ছয় দফা দাবি জানান ভিএক্স কর্মীরা।
তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচার, কর্তব্যে অবহেলায় হাটহাজারীর ওসিকে অপসারণ, হত্যায় সিএফসি গ্রুপের কর্মী রাকিব-অমিত-সুমনকে গ্রেপ্তার, হলে ছাত্রলীগের অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আটক ‘নিরাপরাধ’ ভিএক্স কর্মীদের মুক্তি এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার।
শনিবারের মধ্যে এসব দাবি পূরণ না হলে পরদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধের হুমকি দেন তারা।
গত রোববার বুদ্ধিজীবী দিবসে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বুদ্ধিজীবী চত্বরে একসঙ্গে ফুল দিয়ে ফিরে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ছাত্রলীগের ভিএক্স ও সিএফসি গ্রুপ।
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী তাপস সরকারকে শুরু থেকে নিজেদের কর্মী দাবি করছে সিএফসি।
এছাড়া সংঘর্ষের সময় শাহজালাল হল থেকে ভিএক্স’র আশরাফুজ্জামান আশাসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে গুলি ছোড়া হচ্ছিল বলে পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও সিএফসি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
ওই দিন সংঘর্ষের পর শাহজালাল হলে তল্লাশি চালিয়ে একটি পিস্তল, সাত রাউন্ড গুলি, বিপুল পরিমাণ লোহার রড, লোহার টুকরা, পাথর, বড় আকারের ছোরা উদ্ধার করে পুলিশ।
সে সময় ৩০ জনকে আটক করা হয়, যাদের ২৪ জনকে পুলিশের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার হাটহাজারী থানায় তাপসের এক সহপাঠীর করা হত্যা মামলায় ভিএক্স গ্রুপের ৩০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের তিনজন অস্ত্র মামলায় কারাগারে আছেন।