কয়েকজন আসামির নাম-ঠিকানা ভুল থাকায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার অভিযোগপত্র ফেরত দিয়েছে আদালত।
Published : 03 Dec 2014, 05:52 PM
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা পারুলকে আগামী ২১ ডিসেম্বর নতুন করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার মামলার নির্ধারিত দিনে ভুলের বিষয়টি জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা তা সংশোধনের জন্য আদালতের কাছে সময় চান।
শুনানি শেষে হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রোকেয়া আক্তার অভিযোগপত্র ফেরত দিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের নতুন তারিখ ঠিক করে দেন।
শুনানির শেষ পর্যায়ে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভও করেন।
তাদের অভিযোগ, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছকে ‘চক্রান্তমূলকভাবে’ এ মামলায় জড়ানো হয়েছে।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে নতুন যে ১১ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী ও সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীরও রয়েছেন।
তৃতীয় দফায় তদন্ত শেষে মেহেরুন্নেছা পারুল গত ১৩ নভেম্বর এই ১১জনসহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করে হবিগঞ্জের আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এর আগে দুইবার দেয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের নামও এসেছে।
ওই হামলায় আরো নিহত হন কিবরিয়ার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।
হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ খান ওই রাতেই হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন।
প্রথমে সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান মামলাটি তদন্ত করে ১০ জনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২০ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এই অভিযোগপত্রে জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল কাইউম, ও ব্যাংক কর্মকর্তা আয়াত আলী, কাজল মিয়া, সাবেক জেলা ছাত্রদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক সেলিম আহমেদ, জিয়া স্মৃতি গবেষণা পরিষদ জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী, বিএনপি কর্মী তাজুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন জালাল, ইউনিয়ন বিএনপির নেতা জমির আলী, জয়নাল আবেদীন মোমিন ও মহিবুর রহমানকে আসামি করা হয়।
এরপর মামলার বাদী আবদুল মজিদ খান ২০০৬ সালের ৩ মে সিলেট দ্রুত বিচার আদালতে নারাজি আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে। এরপর ১৪ মে তিনি হাই কোর্টে আপিল করেন।
আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্ট ‘কেন অধিকতর তদন্ত করা যাবে না’ মর্মে রুল জারি করে। এই রুলের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের ১৮ মে লিভ টু আপিল করে সরকার। আপিল বিভাগ সরকারের আপিল খারিজ করে।
এরপর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়, যার দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামকে।
তিনি ২০১১ সালের ২০ জুন আরও ১৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আগের আসামিদেরও এতে রাখা হয়।
এ অভিযোগপত্রে নতুন যোগ হয় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, লস্করই তৈয়বার সদস্য আব্দুল মজিদ কাশ্মিরি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, মহিউদ্দিন অভি, শাহেদুল আলম দিলু, সৈয়দ নাঈম আহমেদ আরিফ, ফজলূল আলম মিজান, মিজানুর রহমান মিঠু, মোহাম্মদ আব্দুল হাই, মোহাম্মদ আলী, মুফতি সফিকুর রহমান, বদরুল এনায়েত ওরফে মো. বদরুল, বদরুল আলম মিজানের নাম।
কিন্তু এরপর আবার ২০১১ সালের ২৮ জুন কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া অভিযোগপত্রে হবিগঞ্জের বিচারিক আদালতে নারাজি আবেদন করেন।
২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি নারাজি আবেদন গ্রহণ করেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক। এরপর তৃতীয়বারের মতো অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির এএসপি মেহেরুন নেছা।
এই অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা নতুন ১১ জনের নাম উল্লেখ করলেও তিনজনকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেন।
হারিছ চৌধুরী, আরিফুল হক ও গউসের সঙ্গে এতে আসামি হিসাবে রয়েছেন হাফেজ মো. ইয়াহিয়া, মওলানা শেখ আবদুস সালাম, আবদুল জলিল, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান ও দেলোয়ার হোসেন রিপন।
অভিযোগপত্রে ইউসুফ বিন শরীফ, আবু বক্কর আব্দুল করিম ও আহছান উল্লাহর নাম দেওয়া হলেও প্রথম দুজনের ঠিকানা না পাওয়ায় এবং তৃতীয়জনের মৃত্যু হওয়ায় তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।