‘তাৎক্ষণিক যোগাযোগে’ একমত দুই দেশ

বাংলাদেশ ও ভারতের ভূখণ্ড জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ ও তথ্য বিনিময়ের বিষয়ে একমত হয়েছেন দুই দেশের তদন্ত কর্মকর্তারা।

কামাল হোসেন তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2014, 11:59 AM
Updated : 19 Nov 2014, 07:43 PM

ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) চার সদস্যের সঙ্গে ঢাকায় গত দুই দিনে বাংলাদেশের ছয় সদস্যের কমিটির কয়েক দফা বৈঠকে বার বার এ বিষয়টি এসেছে। 

দু’পক্ষই বলেছে, দুই দেশের কোথাও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলে বা কোনো জঙ্গি গ্রেপ্তার বা আটক করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে দুই দেশের গোয়েন্দাদের তথ্য বিনিময় জরুরি।

এসব বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এনআইএ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তাদের মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে বলেছেন, ‘কোনো কিছু জানার প্রয়োজন মনে করলে তাৎক্ষণিকভাবে জানাবেন। আমাদের দিক থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে’।”

বাংলাদেশের কর্মকর্তারাও যে কোনো প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

দুই দেশের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্য বিনিময় করা গেলে তদন্তের গতি বাড়বে। এতে দুই পক্ষই উপকৃত হবে।

সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ও মঙ্গলবারে পুলিশ সদরদপ্তরে এনআইএ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম দুই বৈঠকেই উপস্থিত ছিলেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “জঙ্গি দমন নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। এনআইএর প্রতিনিধিরা তাদের দেশে যাওয়ার বিষয়টি কয়েকবার বলেছেন।

“আমাদের সরকার মনে করলে আমরা যাব। জঙ্গি দমন বিষয়ে সবাই একমত।”

গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর এনআইএ তদন্তের দায়িত্ব নেয়। এরপরই ওই ঘটনায় বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার কথা বলেন এ সংস্থার কর্মকর্তারা।

এনআইএ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভারতীয় গোয়েন্দারা আন্তঃদেশীয় একটি জঙ্গি নেটওয়ার্কের তথ্য পেয়েছেন। এর পরপরই বাংলাদেশে তদন্ত চালানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে এবং এনআইএর চার সদস্যের প্রতিনিধি দল সোমবার ঢাকায় পৌঁছায়।

বর্ধমানের ঘটনায় বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, “তারা আমাদের দায়ী করে কোনো কথা বলেননি। শুধু বলেছেন, প্রয়োজনের তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করতে।”

এ দুটি বৈঠক ছাড়াও মঙ্গলবার রাতে র্যামব সদরদপ্তরে এক বৈঠকে অংশ নেয় এনআইএর প্রতিনিধি দল। ভারতে পালিয়ে থাকা ১০ জঙ্গিসহ ৫১ অপরাধীর একটি তালিকা ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে দেন র্যা ব কর্মকর্তারা। এনআইএ প্রতিনিধি দলও বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনসহ ১১ জনের নামের একটি তালিকা র্যা বকে দেয়।

এই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বুধবার সকালে ঢাকা ত্যাগ করেন বলে মনিরুল ইসলাম জানান।

“এনআইএ প্রতিনিধি দলের দেওয়া তালিকা পর্যালোচনা করে তিনটি ‘কমন’ নাম পাওয়া যায়, যাদের দুই দেশই খুঁজছে। এরা হলো- পলাতক জেএমবি সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি, জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান এবং ফারুক হোসেন।”

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ মেরে জেএমবির শুরা সদস্য রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮) এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মিজানকে (৩৫) ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

পালানোর পথে ওইদিনই মির্জাপুরে গ্রেপ্তার হন রাকিবুল হাসান। পরে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তিনি। আর ফারুক হোসেন ওরফে জামাই ফারুক ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী বলে পুলিশের সন্দেহ।

মনিরুল ইসলাম বলেন, “এনআইএ মনে করছে, বর্ধমানের ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা আছে। এ কারণেই তাদের খুঁজছেন ভারতের গোয়েন্দারা।”