ফলসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ব্যবহৃত যন্ত্র নির্ভুল তথ্য দেয় না বলে মত দিয়েছে বিএসটিআই।
Published : 11 Nov 2014, 08:26 PM
হাই কোর্টের আদেশে সাতটি ফল পরীক্ষা করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এক প্রতিবেদনে একথা বলেছে।
বিএসটিআই জানিয়েছে, ডিএমপির ব্যবহৃত ‘জেড ৩০০’ মডেলের ‘ফরমালডিহাইড মিটার’ দিয়ে বাজার থেকে সংগৃহীত আপেল, আঙ্গুর, কলা, খেজুর, কমলা, আম ও মাল্টা পরীক্ষায় তারা ফরমালিনের উপস্থিতি পেয়েছেন। অথচ একই ফল বিএসটিআই ল্যাবের নিজস্ব পদ্ধতি অনুসরণ করে পরীক্ষায় শুধু আমে ফরমালিন পাওয়া গেছে।
আবার ট্রেসার ইলেকট্রকম লিমিটেড থেকে ডিএমপির ব্যবহৃত মডেলের আরেকটি যন্ত্র এনে দুই যন্ত্রের পরীক্ষায় একই ফলের প্রতিটিতেই ভিন্ন মাত্রায় ফরমালিনের উপস্থিতি দেখা গেছে।
“এরমধ্যে ডিএমপির যন্ত্রটি কমলায় দশমিক ২১ এবং মাল্টায় দশমিক শূন্য ৪ মাত্রার ফরমালিন দেখালেও ট্রেসারের যন্ত্রটি উভয় ফলে শূন্য মাত্রার ফরমালিন দেখায়।
“এছাড়া আম, আপেল, আঙ্গুর ও খেজুরে ট্রেসারের যন্ত্রে বেশি ফরমালিন দেখিয়েছে। ডিএমপির যন্ত্র কলায় বেশি ফরমালিন দেখিয়েছে,” বলা হয়েছে বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদনে।
“একইভাবে ফরমালিনমুক্ত ফল ২ শতাংশ ফরমালডিহাইড দ্রবণে ভেজানোর পর শুকিয়ে দুটি যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করলে ভিন্ন ফল পাওয়া যায়।”
বিএসটিআই বলেছে, ওই যন্ত্রটি খাদ্যদ্রব্য ও ফলে দেওয়া ফরমালিনের উপস্থিতি নির্ভুলভাবে নির্ণয়ে উপযোগী নয় বলে মনে হয়।
বিএসটিআইয়ের পরিচালক (রসায়ন) মো. আখতারুজ্জামান ও পরীক্ষক (ফুড অ্যান্ড ব্যাক্ট) মো. রাশেদুল ইসলামসহ মোট চার কর্মকর্তার স্বাক্ষরে প্রতিবেদনটি হাই কোর্টে এসেছে।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এর আগে বিসিএসআইআরও যন্ত্রটিকে খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন মাপার উপযোগী নয় বলে মত দিয়েছিল।
“আমরা এই সব প্রতিবেদন নিয়ে আদালতের কাছে বলব, যেন সঠিক যন্ত্র দিয়ে ফরমালিন মাপা হয়।”
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফুড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাধন চন্দ্র দাশ ও সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম গত ১৩ জুলাই হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন।
আদেশে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক এবং ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির পরিচালককে ডিএমপির ওই যন্ত্র পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
রিট আবেদনে অভিযোগ করা হয়, ‘ফরমালডিহাইড মিটার জেড ৩০০’ নামের যে যন্ত্র দিয়ে বাংলাদেশে ফলে ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করা হয়েছে বাতাসে ফরমালিন মাপার জন্য।
এই মামলার শুনানিতে মনজিল মোরসেদ বলেন, “ফলে ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ জঘন্য অপরাধ এবং তা বন্ধ করা প্রয়োজন।
“কিন্তু এই সুযোগে যদি সঠিক যন্ত্র ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে ফরমালিন পাওয়ার অজুহাতে হাজার হাজার টন ফল ধ্বংস করা হয়, তা ব্যবসায়ী, কৃষি ও ভোক্তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ।”