রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) ভবনে আবারো আগুন লাগার ঘটনা ‘রহস্যজনক’ বলে মনে করছে আমার দেশ কর্তৃপক্ষ, যাদের কার্যালয় থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
Published : 31 Oct 2014, 07:21 PM
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএসইসি ভবনের এই অগ্নিকাণ্ড ‘সরকারের সুপরিকল্পিত নাশকতা’। অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ‘রহস্য’ দেখতে পাচ্ছে বিএনপির শরিক জামায়াতে ইসলামীও।
ওই ভবনে থাকা এনটিভির চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালু বলেছেন, বার বার কেন এ ভবনে আগুন লাগে তা জানা দরকার।
শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিএসইসি ভবনের ১১ তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। ওই ফ্লোরেই আমার দেশের অফিস। আমার দেশের একটি গুদাম থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। কর্মীরা বলেছেন, অফিস স্থানান্তরের কাজের মধ্যেই এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ভবনের ষষ্ঠ তলায় আরটিভি এবং সপ্তম থেকে নবম তলায় এনটিভি এবং ১১ তলায় আমার দেশের কার্যালয়। এছাড়া ছাদের ওপর এনটিভির দুটি টিনশেড কক্ষে এনটিভির ট্রান্সমিশন স্টেশন।
এর আগে ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এ ভবনেই আগুন লেগে এনটিভি, আরটিভি ও আমার দেশসহ ১০টি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় পুড়ে যায়, যে ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশিত হয়নি।
একসময় এই তিন প্রতিষ্ঠান বিএনপির সাবেক সাংসদ মোসাদ্দেক আলীর মালিকানায় থাকলেও বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারাগারে থেকেই আরটিভি ও আমার দেশের মালিকানা হস্তান্তর করেন। আরটিভির বড় অংশের মালিক হয় বেঙ্গল গ্রুপ। আর আমার দেশের দায়িত্ব নেন বিএনপি সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা মাহমুদুর রহমান, যিনি পত্রিকার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে বর্তমানে কারাগারে।
একই কারণে গত বছর জুনে প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কেবল অনলাইনে কাজ চালিয়ে আসছিল যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধিতায় ‘উসকানিমূলক ও অসত্য’ প্রতিবেদন প্রকাশের অভিযোগে থাকা পত্রিকাটি।
আমার দেশের একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহমুদা ডলি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাদের কার্যালয় শুক্রবার সকালে বিএসইসি ভবন থেকে নিকেতনের একটি ভবনে স্থানান্তরের কথা ছিল। তার কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যেই আগুন লাগে।
“শিফটিংয়ের কারণে নিউজ রুমের কেউ সকালে অফিসে ছিলেন না। আমার কাছে ঘটনাটি রহস্যজনক মনে হচ্ছে।”
আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি সাধারণ আগুন নয়, এ আগুনে রহস্য রয়েছে। আগুনে ১১ বছরের পুরনো দলিলপত্র পুড়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর্কাইভ ও কম্পিউটার।”
আমার দেশের অফিস সহকারী আব্বাস আলী হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অফিস পরিবর্তনের জন্য পাঁচটা এসি ও চেয়ার লিফটে নামিয়েছি। আরো মাল নামানোর প্রস্তুতি চলছিল। এ সময় উত্তর-পূর্ব দিকের স্টোর রূমে আগুনের ফুলকি দেখা যায়। স্টোর রূম তালাবন্ধ ছিল।”
স্টোর রূমের চাবি যার কাছে থাকে, তাকে ফোন করে ডেকে আনা হয় এরপর। তালা খুলে নিজেরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন তারা। তারপর ভবন থেকে নেমে পড়েন।
“১১ তলা থেকে আমি সবার পরে নেমেছি। ১২/১৩ জন ছিলাম। কেউ আটকা পড়েনি বলেই মনে হয়”, বলেন আব্বাস।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) মোহাম্মদ মাহাবুব সাংবাদিকদের জানান, ১১ তলায় ‘কাগজ জাতীয় প্রচুর দাহ্য পদার্থ’ থাকায় নিয়ন্ত্রণে আনতে কষ্ট হয়েছে।
আমার দেশ কার্যালয় স্থানান্তরের বিষয়টি জানা ছিল না বলে জানান পত্রিকাটির সাবেক এই মালিক।
এই অগ্নিকাণ্ডের জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, “সরকার কোনো প্রতিষ্ঠানকে বিরোধী মনে করলেই সেটিকে ধ্বংস করার জন্য তৎপর থাকে। এই কারণেই আমার দেশ পত্রিকা, এনটিভি ও আরটিভি নিশ্চিতভাবেই সরকারি নাশকতার শিকার।”
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ‘নাশকতায় জড়িতদের’ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
আলাদা বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান বলেন, “এই অগ্নিকাণ্ডে আমার দেশ পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে গেছে। এই অগ্নিকাণ্ডের পিছনে কোনো রহস্য আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।”
ক্ষতিগ্রস্তদের ‘উপযুক্ত’ ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি জানান এই জামায়াত নেতা।
বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “যেহেতু আমার দেশ প্রাইভেট অর্গানাইজেশন, তাই তাদের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।
“তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। শিগগিরই অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যাবে।”