যুদ্ধাপরাধের রায় ঘিরে জোরদার নিরাপত্তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামের আমির মতিউর রহমান নিজামীকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে।
Published : 28 Oct 2014, 08:10 PM
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বুধবার রায়ের দিন ঠিক করার পরপরই রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদারের প্রস্তুতি শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিদ্ধান্ত হয় বিজিবি নামানোরও।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, অরাজকতা সৃষ্টির কোনও চেষ্টা হলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে।
এর মধ্যেই সন্ধ্যায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে বের করা হয় ৭১ বছর বয়সী নিজামীকে, যিনি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের ১৬টি অভিযোগে অভিযুক্ত।
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রায়ের সময় আসামির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক বলে আসামিকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নিজামীকে একটি মাইক্রোবাসে করে কাশিমপুর থেকে বের করা হয়।
রাত ৮টার দিকে জামায়াত আমিরকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢোকানো হয় বলে জ্যেষ্ঠ কারাররক্ষক মো. ফরমান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
২০১০ সালের ২৯ জুন থেকে নিজামী কারাবন্দি। অন্য একটি মামলায় সেদিন গ্রেপ্তারের এক মাস পর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এরপর থেকে বেশিরভাগ সময় নিজামী কাশিমপুর কারাগারেই ছিলেন। গত ২৬ জুন সেখান থেকে তাকে গাজীপুর হাসপাতালে নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।
দুই দফা পেছানোর পর নিজামীর রায়ের নতুন তারিখ ঘোষণার পর তার দলের আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এর আগে নেতাদের রায়ের দিন হরতাল ডেকেছিল জামায়াত।
তবে রায় ঘিরে যে কোনও ধরনের সহিংসতা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায় ঘিরে কেউ যেন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না করতে পারে, সেজন্য রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।”
এছাড়াও শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকবে গোপন সিসি ক্যামেরা। প্রয়োজনে ক্যামেরার ধরা পড়া ছবি দেখে অপরাধীদের সনাক্ত করবে পুলিশ।
নিয়মিত টহলের পাশাপাশি র্যাবও সতর্ক থাকবে বলে বাহিনীর মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান জানান। “প্রত্যেকবারের মতো এবারও র্যাব রায় ঘিরে সতর্ক অবস্থানে থাকবে, কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চাইলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন তিনি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় পুলিশ-র্যাবকে সহযোগিতা দিতে বিজিবিও মঙ্গলবার রাত থেকে টহলে নেমেছে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসিন রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাবনা, খুলনা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় সীমান্ত রক্ষীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে।
একাত্তরে আল বদর বাহিনীর প্রধান নিজামীর বাড়ি পাবনায়। সেখানেও যে কোনও ধরনের নাশকতা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।
নিজামীর এলাকা সাঁথিয়া উপজেলায় র্যাব ও পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে। সাঁথিয়া থানার ওসি শাহিদ মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাক্ষীরা যেন নিরাপত্তায় থাকতে পারে, সেদিকে পুলিশের বিশেষ নজর রয়েছে।”
সাঁথিয়ার আটজন নিজামীর যুদ্ধাপরাধের সাক্ষ্য দেন। তারা কেউ নিরাপত্তাহীন বোধ করলে পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে। তাদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তায় উপজেলার ডাকবাংলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে ওসি জানান।
নিজামীর রায় ঘিরে জামায়াতের শক্তিশালী প্রভাব থাকা চট্টগ্রামেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বুধবার ভোর থেকে বিভিন্ন স্থানে চেক পোস্ট বসানো হবে বলে নগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ সক্রিয় থাকবে।”
নগর পুলিশ সদস্যদের বাইরে পাঁচ প্লাটুন করে এবিপিএন ও শিল্প পুলিশ এবং ছয় প্লাটুন বিজিবি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (গোয়েন্দা) নাইমুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর উপজেলা হিসেবে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড ও হাটহাজারীতে বিজিবি মোতায়েন থাকবে।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় এবং নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে এই উপজেলাগুলোতে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় পুলিশসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন।