গত নয় মাসে ঢাকায় ট্রেনের নিচে পড়ে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর তথ্য জানিয়ে এসব দুর্ঘটনার জন্য জনসচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
Published : 11 Sep 2014, 11:31 PM
বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে দুই লাইনের মাঝে থাকা চার ব্যক্তি দুটি ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হন, যেখানে রেললাইনের পাশেই বাজার বসে নিত্যদিন।
অবৈধ এই বাজার, রেল লাইনের পাশে অবৈধ বস্তি বসানোকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করলেও তা উচ্ছেদে ব্যর্থ হওয়ার জন্য লোকবলের অভাবকে কারণ দেখালেন রেলওয়ের ঢাকা অঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক কামরুল আহসান।
বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনায় চারজনের মৃত্যুর পর এই বছরের হতাহতের পরিসংখ্যানের খোঁজ নিতে গেলে কমলাপুর রেল স্টেশন থানার অপারেশন অফিসার রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ৯ মাসে ট্রেনের নিচে পড়ে ২৩৮ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ১৯২ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী।
তবে এর মধ্যে আত্মহত্যার কয়েকটি ঘটনাও রয়েছে বলে তিনি জানান। ট্রেনের নিচে পড়া ছাড়া কয়েকটি মৃত্যু ঘটেছে লেভেল ক্রসিংয়ে গাড়ির সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে।
রাজধানীর কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত প্রতিদিন ৯৬টি ট্রেন চলাচল করে বলে জানান রফিকুল। এই ট্রেনগুলোর নিচে পড়ে দুইশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কমলাপুর থেকে আরেক লাইনে নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল করে।
বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনা কারওয়ান বাজারের যে স্থানটিতে ঘটেছে, সেখানে প্রতিদিনই পাইকারি মাছের বাজার বসে।
ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুল মজিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জামালপুর থেকে আসা যমুনা এক্সপ্রেস সকাল ৯টার দিকে কারওয়ানবাজার এলাকায় পৌঁছালে একটি লাইনের ওপর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা পাশের লাইনে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ঠিক তখনই ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া কর্ণফুলি এক্সপ্রেস সেখানে পৌঁছালে দুই ট্রেনের মাঝে পড়ে যান তারা।
আর এতে দুই ট্রেনের ধাক্কায় চারজন নিহত এবং অন্তত ১৬ জন আহত হন বলে রেলওয়ের সহকারী পরিচালক (অপারেশন) মো. সাইদুল ইসলাম জানান।
তেজগাঁও ও কারওয়ান বাজারে রেললাইনের ওপর বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে প্রতিদিনই বসেন বিক্রেতারা, যার মূল ক্রেতা রেল লাইনের ধারে গড়ে ওঠা অবৈধ বস্তি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ট্রেন আসলেই হকাররা তাদের পণ্য সরিয়ে নিচ্ছেন পাশে, ট্রেন চলে গেলেই আবার চলে আসছেন রেল লাইনের ওপর।
“কারওয়ান বাজারে রেললাইনের উপর ও পাশে যেন বাজার না বসে সেজন্য উচ্ছেদ অভিযানও চালানো হয়েছে কয়েকবার। তবে রেলের লোকবল কম থাকায় সেসব এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারে কাজ করা যায়নি। আর তার সুযোগ নিয়ে বারবার বাজার বসে যায়।”
নাখালপাড়া এলাকার বাসিন্দা আহমাদুল হাসান আশিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েকদিন পর পর বাজার উচ্ছেদ অভিযান চলে ঠিকই, তবে স্থায়ীভাবে বাজার বসানো বন্ধ হচ্ছে না।”
গত রমজানে টঙ্গী ও তেজগাঁও এলাকা সংলগ্ন রেলক্রসিং এলাকায় যেন বাজার না বসে সেজন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছিল রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের ঢাকার বিভাগীয় কর্মকর্তা নূর নবী কবির।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক বছর আগে মহামান্য হাই কোর্ট রেলক্রসিং এলাকার বস্তি উচ্ছেদ না করতে রেল কর্তৃপক্ষকে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল, তা মেনে চলা হচ্ছে।
“তবে বস্তির লোকেরা ও অন্যরা রেললাইন সংলগ্ন এলাকায় দোকান বসায়। সরালেও তারা আবার রেল লাইনে আবার বাজার বসিয়ে ব্যবসা শুরু করে দেয়।”
রেলে দুর্ঘটনা ঘটনার আরেকটি স্থান হল লেভেল ক্রসিংগুলো। ঢাকা রেল বিভাগে লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা শতাধিক।
এর মধ্যে মহানগরীতে তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, খিলগাঁও, নাখালপাড়া ও বিমানবন্দর এলাকা সংলগ্ন রেলক্রসিংগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরছে রেল বিভাগ।
গত ১ অগাস্ট মালিবাগে একটি প্রাইভেটকার রেললাইনে উঠে গিয়েছিল সঙ্কেত না মেনেই। পরে ট্রেনের ধাক্কায় গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়, আহত হন এর তিন আরোহী।
রেলওয়ের সহকারী পরিচালক (অপারেশন) মো. সাইদুর রহমান তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, “ট্রেন আসার সময় গেইটম্যান বার ফেললেও প্রাইভেটকারটি বিপরীত দিক থেকে এসে ঢুকে পড়ে। রেললাইনের ওপর উঠার পর ওই গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়।”
মালিবাগ রেলক্রসিং নিয়ে মোটরবাইকে নিয়মিত যাতায়াতকারী রেদোয়ান বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ট্রেন আসার সিগনাল পেয়েও বিভিন্ন গাড়ি চলতে থাকে। আবার অনেককে কানে হেডফোন নিয়েও রেললাইন পার হতে দেখা যায়।”
রেল লাইনে এসব দুর্ঘটনার জন্য জনসচেতনতার অভাবকে দায়ী করে ঢাকা রেলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক কামরুল আহসান বলেন, “দুর্ঘটনায় কারো যেন জীবন দিতে না হয় সেজন্য আমরা জনগনকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।”
রেল পুলিশের উপমহাপরিদর্শক কামরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা অতিরিক্ত কাজ হিসেবে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
“রেল স্টেশন, রেললাইন এলাকায় সচেতনতামূলত লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, স্টিকার জনগণের মধ্যে বিলি করছি। তাছাড়া জনগণ যেন ক্রসিংয়ে ট্রেন আসার সময় সঙ্কেত ও নির্দেশনা মেনে চলে তাও বলছি।”