গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে ডুবে থাকা বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ।
জেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৩৫৩টি গ্রামের প্রায় সাড়ে চারশ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হওয়ায় গো খাদ্যের সংকটের সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা খর, ঘাসসহ দানাদার খাবারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
জেলার প্রায় ৩৮ লাখ গৃহপালিত পশু-পাখির মধ্যে বন্যাদুর্গত এলাকায় খাদ্য সংকটে পড়েছে প্রায় ১৮ লাখ। শুধু গরুর খাবার বাবদ জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ দুই কোটি ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকায় গবাদি পশুর চারণযোগ্য জমি, রাস্তা-ঘাট যেখানে পশুপাখির ঘাস বা খাবার পাওয়া যেত সেগুলো এখন ২১ দিন ধরে পানির নীচে রয়েছে।
মানুষ তাদের গবাদি পশু-পাখির খাদ্যের যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এরইমধ্যে উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার কোনো কোনো এলাকায় গরুর খুরা রোগ দিয়েছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গৃহপালিত পশু-পাখি চর এলাকার বেশিরভাগ মানুষের প্রধান সম্পদ। অনেকে তাদের পশুসম্পদ বিভিন্ন উঁচু এলাকায় স্থানান্তর করলেও অনেকে বাড়িতেই কলার ভেলায় বা কাঠ-বাঁশের মাচা করে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ রেখেছেন।
দূর-দূরান্ত থেকে নৌকায় করে সংগ্রহ করে কাশিয়া, পাট পাতা ও ধনচা পাতা সংগ্রহ করে গরু-মহিষকে খাওয়াচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় ৫ লাখ ৬৮ হাজার গরু, ১০ হাজার মহিষ, ২ লাখ ৪২ হাজার ছাগল, ১ লাখ ৩০ হাজার ভেড়া, ২৭ লাখ ৫০ হাজার মুরগি, ১২ হাজার হাঁস, ৭৭ হাজার কবুতরসহ অন্যান্য কিছু প্রাণী বসতবাড়ি ও খামারে লালনপালন করা হচ্ছে।
এরমধ্যে নয় উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে দুই লাখ ৫০ হাজার গরু, পাঁচ হাজার মহিষ, এক লাখ ২০ হাজার ছাগল, ৬০ হাজার ভেড়া, ১৩ লাখ মুরগি বন্যাদুর্গত এলাকায় মধ্যে রয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস ছামাদ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্যার সময় ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে গরুর খুরা রোগ দেখা দেয়। আমরা এরইমধ্যে রোগ প্রতিরোধে টিকা দেয়ার কাজ শুরু করেছি।”
এছাড়া বন্যাদুর্গত এলাকায় পশু সম্পদ রক্ষায় ২ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। প্রতি গরুর জন্য ৭ দিনে ১ কেজি খাবার ৪৫ টাকা দাম ধরে এ চাহিদা তৈরি করা হয় বলে তিনি জানান।
সরেজমিন চরাঞ্চল
যাত্রাপুর বাঁধে মজিবর, বায়েজিদ, নুর হোসেন ও ফজলার রহমান খোলা আকাশের নীচে গরু-ছাগল-ভেড়া নিয়ে গাদাগাদি করে এক সপ্তাহ থেকে আছেন।
তিনি বলেন, “নিজে খাই, না গরু-ছাগলোক খাওয়াই? আবার চুরির ভয়ে রাতে জেগে পাহাড়া দিতে হয়। এক মণ খরের দাম ৩০০ টাকা। হাতে কাজ নেই, নেই টাকা।”
একই এলাকার পোড়ার চর গ্রামের শাহ আলম (৪০) ও শাহাজামালও (৪৫) একই সমস্যায় আছেন।
শাহ আলম বলেন, “কাশিয়া (ঘাস) পানিতে ডুইবা থাকায় কাইটা আনবার পারছি না গরু-বাছুরের লাগি। নিজেগো খাবারের থাইকা কেই কেই ভাত নিয়া পান্তা কইরা পশুকে খিলাইতাছি। কিন্তু হ্যাতে হ্যাগোর সঠিক খাওন হইতাছে না। হেরা দিন দিন কাহিল হইতাছে।”
মুছল্লীপাড়া গ্রামের নুর ইসলাম (৫০) বলেন, “বাড়িতে পানি উঠার লগে লগে আমার গরু-বাছুর ৭টা, ছাগল ৩টা ও ৭টা মুরগি পার্শ্ববর্তী পোড়ার চরের গুচ্ছ গ্রামের উঁচা ভিডায় লইছি। হেগোরে ভূষি, পান্তা ভাতসহ খাওন যোগাইবার যায়া আমার জমা টাকা শ্যাষ।
“ছাগল ৩টারে নিয়া দিনে ২বার নৌকায় তুইলা ডুবন্ত কোস্টাখ্যাতে (পাট ক্ষেত) লইয়া যাই। হেরা নৌকা থন কোস্টার পাতা খাইয়া পেট ভরায়। যেদিনকা যাইবার পারি না হেইদিন হ্যারা উপাস থাহে।”