স্থানীয় পত্রিকা লন্ডন ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই নির্বাচন বাতিল ঘোষণার অনুরোধ জানিয়ে করা একটি আবেদন আমলে নিয়ে হাই কোর্ট শুনানি গ্রহণের সিদ্ধান্ত দেয়ার পর সোমবার আদালতে ৭০ পৃষ্ঠার নথি দাখিল করেন আবেদনকারীরা।
এসব নথিতে বলা হয়, নির্বাচনে জয় লাভের জন্য বিতর্কিত মেয়রের পক্ষে ব্যাপক পোস্টাল ভোট জালিয়াতিসহ ‘ত্রাস’ সৃষ্টি করা হয়।
মেয়র লুৎফর বা তার হয়ে যারা কাজ করেছেন তারা নির্বাচনের আগে স্থানীয় একটি বাংলাদেশি রেস্তোরাঁয় বৈঠকে দলীয় কর্মীদের প্রত্যেককে আড়াইশ’ করে পোস্টাল ভোটের ফরম সংগ্রহ করে তা পূরণ করার নির্দেশ দেন।
ওই নির্বাচনে লেবার পার্টির জন বিগসকে তিন হাজার ভোটে হারিয়ে বিজয়ী হন লুৎফর। টাওয়ার হ্যামলেটসের মোট এক লাখ ৮২ হাজার ভোটের মধ্যে লুৎফর প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার এবং বিগস ৩৪ হাজারের কিছু বেশি ভোট পান।
সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত ব্রিটেনের প্রথম মুসলিম মেয়র লুৎফরের সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণায় বলেন যে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থীকে ভোট দেয়া হবে ‘অনৈসলামিক ও পাপের’ এবং তার পক্ষে ভোট দেয়া হবে ‘পূণ্যের ও ইসলামী কাজ’।
মেয়রের জ্ঞাতসারে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর নেতাদের কাছ থেকে ভোটের প্রতিশ্রুতি নিয়ে তাদের ঘুষ দেয়া হয় বলেও এতে অভিযোগ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, টাওয়ার হ্যামলেটস বরোয় বাংলা পত্রিকাগুলোতে লুৎফরের প্রতিদ্ব্ন্দ্বী বিগসকে ‘বর্ণবাদী’ বলে প্রচারণা চালানো হয়।
নথিতে অভিযোগ করা হয়, মেয়র লুৎফর রহমান ‘নির্বাচনে কারচুপির এই বিষয়গুলো জানতেন বা সন্দেহ করলেও সেগুলো ঠেকাতে তিনি ন্যূনতম বা কোনো পদক্ষেপই নেননি’ এবং সে কারণে তিনিও এই দুর্নীতির জন্য দায়ী।
এতে দাবি করা হয়, এক বৈঠকে লুৎফরের পুনর্বিাচিত হওয়ার জন্য কাজ করতে টাওয়ার হ্যামলেটসের কর্মকর্তাদের বলা হয়। তার পক্ষে প্রত্যেককে ১০০ ভোট জোগাড় করতে বলা হয় এবং তা না করতে পারলে ‘কাউন্সিলের চাকরি হারানোর’ হুমকি দেয়া হয়।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কনজারভেটিভ দলের নেতা পিটার গোল্ড বলেন, “নির্বাচনী এই পিটিশন বরোয় চলমান নির্বাচনী অসাধু তৎপরতা নিয়ে অধিবাসীদের দীর্ঘ দিনের উদ্বেগের ইঙ্গিত দিয়েছে। একজন অভিজ্ঞ বিচারকের সামনে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখাই সঠিক হবে।”
আদালতে পিটিশনকারীরা টাওয়ার হ্যামলেটসের ওই নির্বাচনের ফল বাতিল করার আবেদন করেছেন, যে নির্বাচনে বোরোর কোনো কোনো কেন্দ্রের ফল প্রকাশে পাঁচদিনেরও বেশি দেরি হয়।
এর আগে টাওয়ার হ্যমালেটসে নির্বাচনের পরপরই ভোট গণনায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে একটি নির্বাচনী অভিযোগ তদন্তকারী কমিশন।
ভবিষ্যতে ভোটগণনায় জালিয়াতির আশঙ্কা দূর করতে এই বরোয় শুধু ইংরেজি ভাষীদের নির্বাচন কর্মকর্তা ও এজেন্ট নিয়োগ দিতে পরামর্শ দেয় তারা।
২০১০ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথম দফায় বাংলাদেশি অধ্যুষিত এই কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন লুৎফর রহমান। তখন থেকেই তার বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
সম্প্রতি বিবিসির সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে অনুষ্ঠান প্যানোরমায় বলা হয়, টাওয়ার হ্যামলেটসে নির্বাচিত মেয়র কর্মকর্তাদের সুপারিশ নাকচ করে বাংলাদেশি ও সোমালি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে অনেক বেশি অনুদান দিয়েছেন, যাতে অন্যান্য সংগঠনকে অনুদান দেয়ার ক্ষেত্রে তহবিল কমে গেছে।
বিবিসির ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে লুৎফুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে পরিদর্শক নিয়োগ করে যুক্তরাজ্য সরকার।
আর তার বিরুদ্ধে ‘বিভেদমূলক গোষ্ঠিগত রাজনীতির চর্চা’র অভিযোগ আনেন যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এরিক পিকলসও।