প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে না পেরে একটি দল নিজেদের ব্যর্থতার আগুনে সবাইকে পোড়াতে চাচ্ছে ।
Published : 23 Jul 2014, 09:02 AM
মঙ্গলবার লন্ডনের হিলটন হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে ইফতারপূর্ব এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
“কোন দল যদি নির্বাচন না করে আর মনে করে যে নির্বাচন ঠেকাবে; ঠেকাতেও যদি ব্যর্থ হয়, আন্দোলন করতেও যদি ব্যর্থ হয় সে দায় তো বাংলাদেশের জনগণের না। সে দায় তো আমাদের না। ব্যর্থতার আগুনে তারা সবাইকে পোড়াতে চাচ্ছে। আল্লাহর রহমতে পারবে না- আমি আপনাদের কথা দিয়ে যাচ্ছি।”
দেশকে পিছিয়ে দিতে ‘মহলবিশেষের’ ষড়যন্ত্রের বিষয়ে প্রবাসীদের সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “পহেলা জানুয়ারির মধ্যে আমরা সকল ছাত্র-ছাত্রীদের বই বিতরণ করেছি। কারণ আমাদের সদিচ্ছা ছিল। হরতাল, খুন, বাস পোড়ানো, ট্রেন পোড়ানো, কোরআর শরীফ পোড়ানো, মসজিদে আগুন দেয়া, বাসে আগুন দেয়া, গাছ কাটা, রাস্তা কাটা...এ হেন অপকর্ম নাই, নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি-জামায়াত করে নাই।
“জনগণ তাদের আহ্বানে সাড়া দেয় নাই। সাড়া দেবে কি করে? ২০০১ থেকে ২০০৬ .... তাদের সেই দুর্নীতি। হাওয়া ভবন খুলে সরকারের মধ্যে সরকার, কমিশন খাওয়া, দুর্নীতি করা, মানি লন্ডারিং করা। সেই পাচার করা টাকা আমরা বাংলাদেশে ফেরত এনেছি। এইসব অপকর্ম তারা করে গেছে। মেয়েদের ধর্ষণ করা, খুন করা, হাত কেটে দেয়া, চোখ তুলে নেয়া; এ হেন অপকর্ম নেই যা তারা করে নাই।”
আন্দোলনের নামে মে মাস থেকে করে জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচশ’র বেশি স্কুল পোড়ানোর তথ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শুধু তাই নয়, তারা প্রিজাইডিং অফিসারকে খুন করেছে।তারপরও নির্বাচন হয়েছে, ৪০ ভাগ মানুষ ভোট দিয়েছে। সেজন্য আমি বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই।”
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় পাওয়ায় অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে পারবেন বলে জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা উন্নয়নমূলক যে কাজগুলো করে যাচ্ছি, সেগুলো বাস্তবায়নের একটা সুযোগ পেয়েছি। ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত যে উন্নয়ন করেছিলাম, সেগুলো তারা নষ্ট করে দিয়েছিল।
“এখনো আমাদের হাতে চার বছর পাঁচ মাস সময় আছে। এরমধ্যে আমরা যে কাজগুলো হাতে নিয়েছিলাম সেগুলো করে যেতে পারবো। এদের হরতাল, জ্বালাও পোড়াও সত্ত্বেও আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি আমরা ৯৫ ভাগ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি।”
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “পদ্মা সেতু নিয়ে একটা চরম ষড়যন্ত্র হয়েছে; আপনারা জানেন যে কারা ষড়যন্ত্র করেছিল। আল্লাহর রহমতে নিজেদের অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি।”
বর্তমান সরকারের সময়ে জাতীয় বাজেট তিনগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের জানান, সারা দেশে ‘ব্যাপক’ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
“ইতোমধ্যে আমি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। ভিসার সমস্যা যাতে না হয় তারা সেটা দেখবেন। আজকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে যে সহায়তা তারা দেন সেটা অব্যাহত রাখবেন।”
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনসহ বিভিন্ন সময় প্রবাসীদের ভূমিকা স্মরণ করেন।
অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীরা বাংলাদশের অর্থনীতির ‘মূল চালিকাশক্তি’। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।
তরুণ সমাজকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান দলের সভানেত্রী।
“তরুণ সমাজকে বলবো। আমরা তো বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। এই তরুণ সমাজকে আওয়ামী লীগের আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। একমাত্র আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের জনগণের কল্যান চায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নতি হয়।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র জয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এই বিশাল সম্পদ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগবে।”
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত ইফতার পার্টিতে অংশ যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ শরীফ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুকসহ দলের নেতাকর্মীরা ইফতারে যোগ দেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী, বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলসহ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরাও ইফতারে অংশ নেন।
আলোচনা সভাশেষে যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের একটি ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের সভাপতি তামিম আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক সজীব ভূইয়া উপস্থিত ছিলেন।