বাগেরহাট শহরের কথিত এক পীরের ঘরে বছরের পর বছর ধরে বন্দি স্ত্রী ও সন্তানদের উদ্ধার করেছে পুলিশ।
Published : 17 Jul 2014, 09:39 PM
নিজেকে পীর দাবিকারী শেখ নূর মোহম্মদ (৭০) শহরের পাশে ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের মেহগনিতলা এলাকায় একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করে সেখানে খানকা শরীফ পরিচালনা করতেন।
বাগেরহাট মডেল থানার ওসি মো. আলী আজম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের সরুই এলাকায় তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার দুই স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক শিশুপুত্রকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
“খানকা শরীফের ওই পরিচালকের ছেলে শেখ বাকি বিল্লাহর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে অভিযান চালিয়ে ওই নারী ও শিশুদের উদ্ধার করা হয়।”
তবে আগেই পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নূর মোহম্মদ বাড়ির পেছনের পথ দিয়ে পালিয়ে যান বলে জানান ওসি।
উদ্ধারকৃতরা হলেন- শেখ নূর মোহাম্মদের প্রথম স্ত্রী কুলসুম বেগম (৫৮), দ্বিতীয় স্ত্রী পারভীন আক্তার (৩৫), প্রথম স্ত্রীর মেয়ে ফাতেমা আক্তার (৩৫), ছোট স্ত্রীর মেয়ে সালমা আক্তার (১১) ও নুর জাহান (৬) এবং ছেলে মাহাবুব বিল্লাহ (৩)।
পরে বিকেলে বাগেরহাট মূখ্য বিচারিক হাকিম আবু তাহেরের আদালতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় নিজেদের ওপর দীর্ঘদিনের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তার দুই স্ত্রী ও বড় মেয়ে।
প্রথম স্ত্রী কুলসুম বেগম আদালতকে বলেন, পর্দার নামে বিয়ের পর থেকে ৪১ বছর ধরে তিনি ঘরে তালাবদ্ধ হয়ে ছিলেন। ১০ বছর আগে তার বাবা মারা গেলে তাকে লাশ দেখতে যেতে দেওয়া হয়নি। দুই বছর আগে তার ছেলে বাকি বিল্লাহ তার মেজ মেয়েকে কৌশলে বাড়ি থেকে বের করে খুলনায় লুকিয়ে রেখে বিয়ে দেয়। এতে তার স্বামী বাকি বিল্লার উপর ক্ষীপ্ত হয়ে লোক দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করেন।
দ্বিতীয় স্ত্রী পারভীন আক্তার বলেন, বিয়ের পর থেকে বন্দি থেকে অতীষ্ট হয়ে তিনি দুই বছর আগে একবার পালিয়ে তার বাবার বাড়ি গিয়েছিলেন। মুরিদদের সহায়তায় নূর মোহাম্মদ তাকে ধরে এনে শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন।
নূর মোহাম্মদের প্রথম স্ত্রীর ছেলে বাকি বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, তার রক্ষণশীল বাবা নিজেকে পীর দাবি করে মেহগনিতলা এলাকায় নিজ জমিতে মাদ্রাসা ও এতিমখানা স্থাপন করেন। সেখানে তিনি তার মুরিদ ও ভক্তদের নিয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেন। শহরে তাদের বাড়িতে কাউকে ঢুকতে বা বাড়ি থেকে কাউকে বের হতে দিতেন না। তার বাবা বাইরে যাওয়ার সময় বাইরে থেকে জানালাবিহীন ঘরের দরজা তালাবদ্ধ করে রেখে যেতেন।
বাকি বিল্লাহ বলেন, তার বাবা মোট চারটি বিয়ে করেছেন। প্রায় ১৫ বছর আগে পারভীন আক্তারকে বিয়ে করেন। তার বাবার অন্য দুই স্ত্রী তার মায়ের উপরে তার বাবার নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে গেছেন।
“ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই বাড়ি থেকে বাকি বিল্লাহর দুই মা ও চার ভাই বোনকে উদ্ধার করা হয়। তাদের আদালতের মাধ্যমে বাগেরহাটে অবস্থিত খুলনা বিভাগীয় নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।”
এবিষয়ে বাগেরহাট পৌরসভার সংরক্ষিত ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মহিলা কাউন্সিলর আলেয়া বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধিত্ব করেছি, সমাজ সেবা করেছি। এরা আমার প্রতিবেশী। কিন্তু আমি কোনোদিন ওই বাড়িতে ঢুকতে পরিনি। এধরনের ভয়াবহ ঘটনার কথা আমার জানাই ছিলো না।”