সুষমাকে খালেদার ‘নালিশ’

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেশী ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাছে ‘নালিশ’ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2014, 06:07 AM
Updated : 27 June 2014, 11:14 AM

তিনি বলেছেন, দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই।

শুক্রবার সোনারগাঁওয়ের প্রেসিডেন্ট স্যুট ‘বেঙ্গলি’তে সকাল ১০টা ২৫ মিনিট থেকে থেকে ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা।

এ সময় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার পঙ্কজ সরনও উপস্থিত ছিলেন।

পরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানও বৈঠকের বিভিন্ন বিষয় অবহিত করেন।

শমসের মবিন বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসনকে জানিয়েছেন, ভারতের নতুন সরকার কোনো বিশেষ দল কিংবা বিশেষ সরকার নয়, পিপল-টু-পিপল সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে চায়।”

এ সময় খালেদা জিয়া ‘বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই’- এমন মন্তব্য করেন বলে জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।

শমসের মবিন সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকের ফাঁকে খালেদার সঙ্গে সুষমা স্বরাজ একান্ত বৈঠক করেছেন। তবে ১২মিনিটব্যাপী ওই বৈঠকে কি কথা হয়েছে তা তিনি জানাননি।

দুই বছর আগে ২০১২ সালে নয়া দিল্লি সফরের সময়ে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিলো খালেদার। তখন সুষমা ছিলেন লোকসভায় বিরোধী দলীয় নেতা।

গত মাসে ভারতের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর নতুন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পান সুষমা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে প্রথম সফরে বুধবার ঢাকায় আসেন বিজেপির এই নেত্রী। তিন দিনের সফরে শেষ দিনে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করলেন।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির পক্ষ থেকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মানুষ ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারকে আবারো অভিনন্দন জানান।”

“ভারতের নির্বাচনের ফলাফলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আশা সঞ্চার হয়েছে, এটি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। দুই দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলাপ-আলোচনা করে পারস্পরিক লাভের ভিত্তিতে সুরাহা হবে।”

ছবি: খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত আলোকচিত্রী নুরুদ্দিন আহমেদ

এ ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আশস্ত করেছেন, এ বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। ভারতের ভেতরে এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তোলার কাজ চলছে।

শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর উন্নয়নের বিষয়। ভারতের নতুন সরকার এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে।”

বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, তারা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্ক গঠন করেছিলেন।

“এ ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ বেশি। আমরা চাই সার্ক আরো শক্তিশালী হউক।”

সুষমা স্বরাজ সার্কের বিষয়ে বলেন, “সার্ক উইল ওয়ান কমন ভয়েস। এ বিষয়টিকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।”

খালেদা জিয়া ভারতের নতুন সরকারকে সার্ককে শক্তিশালী ও টেকসই সংস্থায় পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগকে সাদুবাদ জানান।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ সার্ক শক্তিশালীকরণে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে চায়। আমরা আশা করি, আঞ্চলিক বিষয়গুলো পারস্পরিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সমাধান হবে।”

পরে আবদুল মঈন খান বলেন, “বৈঠকে যে বিষয়টি আলোচনা এসেছে- তা হলো আজ দেশে গণতন্ত্র নেই। তথা কথিত সংসদ জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলন করে না। ভারত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রি দেশ। তার পাশ্ববর্তী দেশের যদি গণতন্ত্র অনুপস্থিত থাকে, তাহলে এই অঞ্চলের উন্নয়ন ব্যাহত হয়। আমরা মনে করি, গণতন্ত্র ব্যতিরেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।”

দেশে নতুন নির্বাচন ও সংলাপ নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে শমসের মবিন বলেন, “এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। এসব আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। দেশে জনগণই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।”

খালেদা জিয়াকে ভারত সরকার আমন্ত্রণ জানিয়েছে কিনা জানতে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।”

ছবি: খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত আলোকচিত্রী নুরুদ্দিন আহমেদ

খালেদা জিয়ার বৈঠক নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে শমসের মবিন বলেন, “সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে এ বৈঠকের বিষয়ে সরকার আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু এসব অতিক্রম করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারত যে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক চায়, এই বৈঠক তারই প্রতিফলন।”

নিরাপত্তার কারণে দেখিয়ে বৈঠকে গণমাধ্যমের কর্মীদের আলোকচিত্র তুলতে দেয়া হয়নি।

বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী।

ঢাকা ছাড়ার আগে সুষমা স্বরাজ সংসদ ভবনে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সুষমা স্বরাজ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গেও।