নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের প্রেক্ষাপটে তার কিছু দিন আগে সাদেক হোসেন খোকার বক্তব্য স্মরণ করিয়ে সব গুপ্তহত্যার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 01 May 2014, 08:13 PM
বৃহস্পতিবার গাজীপুরে সমাবেশে তিনি বলেন, “এখন যত গুপ্তহত্যা, চোরাগুপ্ত হত্যা হচ্ছে, তার জন্য তারাই (বিএনপি) যে দায়ী, এতে কোনো সন্দেহ নেই।”
আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনের লাশ উদ্ধারের পর এজন্য সরকারের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া অভিযোগ তোলার পর প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য এল।
নজরুলের পরিবার এই ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগেরই নারায়ণগঞ্জের দুই নেতাকে দায়ী করেছেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, আধিপত্য নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
নারায়ণগঞ্জের এই ঘটনার সপ্তাহ খানেক আগে দলীয় এক কর্মসূচিতে বিএনপি খোকা সরকার পতনে ‘চোরাগোপ্তা’ কর্মসূচির হুমকি দিয়েছিলেন।
তার ওই বক্তব্যের সূত ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “যাদের চুরি করার অভ্যাস, চোর চোর মন আর যারা ওই রকম হত্যা, গুপ্তহত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, হত্যা-ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসে- তারাই এই চোরাগুপ্তা হামলার রাজনীতি করে এবং সেটাই তারা করে যাচ্ছে।”
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি বিএনপি নেত্রীকে বলব, ওনার ওই চোরাগুপ্তা হামলা আর আন্দোলনের পথ পরিহার করে উনি যেন স্বাভাবিকভাবে আন্দোলন করেন। উনি যেন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করেন।”
‘গুপ্তহত্যার’ বিরুদ্ধে দেশবাসীকেও সজাগ থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
বিএনপি দাবি করে আসছে, বিএনপির দাবি, গত এক বছরে তাদের ৩১০ জন নেতা-কর্মী গুম অথবা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
দলটির চেয়ারপারসন খালেদা বলছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাতে সক্রিয় হতে না পারে, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে তরুণদের গুম করা হচ্ছে।
গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা সংলগ্ন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে শ্রমিক লীগ আয়োজিত এই জনসভা ছিল ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার প্রথম জনসভা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়া বিএনপির ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত ছিল বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
তিনি বলেন, “নির্বাচনে না এসে যে ভুল করেছে, সে ভুলের খেসারত বাংলাদেশের জনগণ কেন দেবে? সে ভুলের খেসারত এদেশের কৃষক-শ্রমিকরা কেন দেবে? এদেশের তরুণ সমাজ কেন দেবে?
“ওনার যে প্রভু, যারা ওনাকে এই বুদ্ধি দিয়েছিল, বরং তাদের কাছেই উনি যাক,” সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদাকে উদ্দেশ করে বলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি চেয়ারপারসন বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না-মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “উনি তো বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায় নাই। ওনার হৃদয়ে কী আছে? ওনার হ্নদয়ে আছে, দেলে আছে, পেয়ারে পাকিস্তান। উনি পেয়ারে পাকিস্তান, হামারা পেয়ার পাকিস্তানই করে যাক।
“পরাজিত শক্তির কাছেই উনি থাকতে চান।”
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস আর দূর্নীতির দেশ হিসাবে পরিচিত ছিল।
“সেই ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে আজ বিশ্বে বাংলাদেশ একটা উন্নয়নের রোল মডেল, সম্ভাবনাময় দেশ, এগিয়ে যাওয়ার দেশ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।”
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত খালেদা জিয়ার লেখার জন্যই আমেরিকা বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করেছে বলে অভিযোগ হাসিনার।
“খালেদা জিয়া বিএনপি নেত্রী আমেরিকার কাছে নালিশ জানান। আর্টিক্যাল লেখেন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বন্ধ করে দিতে। পার্লামেন্টে যখন ধরলাম, তখন উনি বলেছেন, উনি লেখেন নাই।
“এরপর আমেরিকা সে জিএসপি বন্ধ করেছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে খালেদা জিয়া বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিয়েছিলেন।
“দেশের মানুষকে যখন পুড়িয়ে পারে নাই তখন বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দেয়। বিদেশিদের কাছে নালিশ করে। আর, নির্বাচন বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল।”
প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে বলেন, “নালিশ করে বালিশ পায়, ভাঙা জুতার বাড়ি খায়।
“বিদেশিদের কাছ থেকে বালিশ পেয়েছে। আর বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন করে ভাঙা জুতার বাড়ি দিয়েছে।”
বক্তব্যের শুরুতেই গাজীপুরের সন্তান বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ময়েজউদ্দিন আহমদ ও আহসান উল্লাহ মাস্টারকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “তাজউদ্দিন আহমদ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন।
“ময়েজউদ্দিন আহমদকে স্বৈরশাসক এরশাদের সময়ে এবং আহসান উল্লাহ মাস্টারকে খালেদা জিয়ার সময় হত্যা করা হয়।”
খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচনের আগে বক্তৃতায় বলেন, সব বন্ধ কল কারখানা খুলে দেবেন। আর ক্ষমতায় এসে করলো উল্টোটা। আদমজীসহ গাজীপুরের অনেক কল কারখানা বন্ধ করে দেয়।”
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিজেএমসির ২৩টি এবং বিটিএমসির আটটি বন্ধ কল-কারখানা খুলে দিয়েছে বলে জানান তিনি।