উচ্চ আদালতের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা দেয়ার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবীকে তলব করেছে হাই কোর্ট, যাদের একজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির স্বামী তৌফিক নেওয়াজ।
Published : 23 Apr 2014, 06:59 PM
এইচএসসির তিনটি বিষয়ে নৈর্ব্যত্তিক, সৃজনশীল ও ব্যবহারিকে আলাদাভাবে পাসের বিধান অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া ওই রায়ের ভুল ব্যাখ্যা দেয়ার অভিযোগ আনা হয় দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে।
অন্য আইনজীবী হলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক এসএম মুনীর। তিনি সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থী হিসাবে ওই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ওই কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আদালত এই দুজনকে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আরো দুজনের বিরুদ্ধে রুল দিয়েছে।
তবে অভিযোগকারীদের আইনজীবী শাহ মোহাম্মদ আহসানুর রহমান বলেন, আদালত মোট চারজনকে তলব করেছে।
বাকি দুজন হলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।
“রায় অনুসারে কাজ না করার অভিযোগে তাদেরকেও তলব করা হয়েছে,” বলেন আহসানুর রহমান।
বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেয়ার সময় এসএম মুনীরও আদালতে ছিলেন।
আদেশের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি শেষের দিকে গিয়েছিলাম। শুনেছি রুল হয়েছে, কিন্তু বিস্তারিত বলতে পারব না।”
“ওই সময় শোনার মতো মানসিক অবস্থাও ছিল না। তাই আদালত কী আদেশ দিয়েছে, সেটা বলতে পারব না।”
আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না, চারজনের কাছে সেই জবাব চেয়েছে হাই কোর্ট।
ওই চারজনের সঙ্গে শিক্ষা সচিব ও ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিবকেও এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে অভিযোগকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস। সঙ্গে ছিলেন শাহ মোহাম্মদ আহসানুর রহমান।
গত ২৯ জানুয়ারি হাই কোর্টের একটি বেঞ্চের দেয়া এক রায়ে এইচএসসির পদার্থ বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও রসায়নে নৈর্ব্যত্তিক, সৃজনশীল ও ব্যবহারিকে আলাদাভাবে পাসের বিধানকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
রিট আবেদনকারী ২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করেন। পরে ২০১৩ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। ২০১৩ সালের ৩ অগাস্ট তার এই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়।
আবেদনকারী সব বিষয়ে জিপিএ-৫ প্রত্যাশা করলেও প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, তিনি বাংলা, জীব বিজ্ঞান, গণিতে এ প্লাস পেয়েছেন এবং ইংরেজি ও পদার্থ বিজ্ঞানে এ গ্রেড এবং রসায়নে এফ গ্রেড পেয়েছেন।
পরে ৪ অগাস্ট তিনি তার ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেন। কিন্তু পুনঃনিরীক্ষা ছাড়াই পুনঃগণনা করে তার ফল পরিবর্তন হয়নি বলে টেলিটকের মাধ্যমে তাকে জানানো হয়।
রায়ে বলা হয়, “এখানে দেখা যায়, রিটকারী রসায়নের অন্য পার্টগুলোতে উত্তীর্ণ হলেও ব্যবহারিকে প্রয়োজনীয় নম্বর অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। আমাদের মত হচ্ছে, নৈর্ব্যত্তিক, সৃজনশীল ও ব্যবহারিকে পাস করার বিধানকে আইন সমর্থন করে না। এ কারণে তাকে পাস বলে বিবেচনা করা উচিত।”
“পুনঃগণনার পরিবর্তে পুনঃনিরীক্ষা করা যাবে না বলে যে বিধানের কথা বলা হচ্ছে সেটার গেজেট করা হয়নি। অথচ এ ধরনের বিধান করতে হলে গেজেট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’
রায়ে আরো বলা হয়, “যেহেতু আলাদাভাবে পাস করতে হবে বলে কোনো গেজেট করার বিধান নেই এবং কেবল ব্যবহারিকে ফেল করেছেন বলে তাকে ফেল বলা হচ্ছে; সে কারণে তিনি (রিটকারী) সকল বিষয়ে পাস করেছেন বলে ধরে নেয়া হবে। এখন তিনি চাইলে পুনঃনীরিক্ষার জন্য আবেদনও করতে পারেন।”
আবেদনকারীর আইনজীবী আহসানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই রায় অনুসারে আমরা পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করি। কিন্তু তাতে বোর্ড সাড়া দেয়নি। উপরন্তু নোটিসের জবাবে বলেছেন, ‘রুল চূড়ান্ত অনুমোদন করা মানে নির্দেশনা নয়’। এটা রায়ের ভুল ব্যাখ্যা।
“এ ছাড়া আইনজীবী বোর্ডকে দেয়া তার আইনি মতামতে বলেছেন, ‘রায়ে বড় ধরনের ভুল রয়েছে’। কিন্তু তার কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি। এভাবে তিনি ঢালাও দোষারোপ করতে পারেন না। এ কারণে আমরা আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করি।”