জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধসহ ছয় দফা বাস্তবায়ন এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার ত্বরাণ্বিত করার দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণজাগরণ মঞ্চ।
Published : 11 Apr 2014, 08:11 PM
‘ইমরানের কারণে মঞ্চে ক্ষোভ-হতাশা’
দল গঠনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি ইমরান
শুক্রবার শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে দুই দিনের এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসা দুটি সংগঠনের সঙ্গে বিরোধ এবং জাগরণ মঞ্চের সঙ্গে থাকা কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠনের মতপার্থক্যের মধ্যেই নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিলেন ইমরান।
তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামী ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার নির্যাতনের শিকার মিরপুরের আলোকদী গ্রামের অধিবাসীদের সঙ্গে বৈশাখী শুভেচ্ছা বিনিময়। ‘নববর্ষের অঙ্গীকার, নিপাত যাক রাজাকার’ স্লোগানে ওইদিন বিকাল ৩টায় শাহবাগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন।
এছাড়া মঞ্চের ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার প্রতিবাদে ১৮ এপ্রিল সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। ওইদিন বিকাল ৩টায় শাহবাগে সমাবেশ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ইমরান এইচ সরকার জানান, এই কর্মসূচি পালনের জন্য এরইমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
গণজাগরণ মঞ্চের এই সংবাদ সম্মেলন প্রথমে শাহবাগে করার ঘোষণা দেয়া হয়। দুপুরের পরে তা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। পরে শেষ মুহূর্তে তা আবার শাহবাগে নিয়ে আসা হয়। কর্মসূচি ঘোষণা করে সমবেত নেতাকর্মীদের নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে একটি মিছিলও করেন তারা।
হামলায় ক্ষোভ-বিস্ময়
সংবাদ সম্মেলনে গত সপ্তাহে প্রজন্ম চত্বরে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সঙ্গে জাগরণ মঞ্চের কর্মীদের মারামারির বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন ইমরান এইচ সরকার।
তিনি বলেন, “পুলিশ ও পেটোয়া বাহিনীর এমন যুগপৎ মারমুখী আচরণে আমরা ক্ষুব্ধ, বিস্মিত।”
‘লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত’ অনুষ্ঠানে জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকের অনুদান নেয়ার প্রতিবাদ করায় তাদের ওপর হামলা হয় দাবি করে ইমরান বলেন, “ওই কারণে সরকার এবং তাদের পেটোয়া বাহিনী আমাদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়েছে।
“যদিও জন সমালোচনার মুখে সরকার ইসলামী ব্যাংকের অনুদান ফিরিয়ে দিয়েছে, কিন্তু যাদের চক্রান্তে সরকারকে এই ফাঁদে পড়তে হয়েছিল, তাদের ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি।”
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, “জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যে কোনো আঁতাতের বিরুদ্ধে গণজাগরণ মঞ্চকেই একমাত্র বাধা মনে করে বলে মঞ্চকে নির্মূল করার চক্রান্ত নিয়ে মাঠে নেমেছে। এজন্য তারা নিজেদের অভ্যন্তরে থাকা পেটোয়া বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে। প্রোপাগান্ডা মেশিনগুলোকে সক্রিয় করেছে এবং পাশাপাশি সরকারি পুলিশ বাহিনীকেও নগ্নভাবে ব্যবহার করেছে।”
সরকারের ভিতরে জামায়াত-শিবিরের ‘এজেন্ট’ রয়েছে মন্তব্য করে তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান ইমরান।
যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করায় এবং জাগরণ মঞ্চে হামলার সঙ্গে সাংগঠনিক দায় না থাকার কথা বলায় ছাত্রলীগকে সাধুবাদ জানান মঞ্চের মুখপাত্র।
পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের নাম নিয়ে কেউ মঞ্চের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ইমরান বলেন, “আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐহিত্যবাহী সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে যারা জামায়াত শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে, তাদের ব্যাপারে নিজেদের সচেতন থাকতে হবে।”
জাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর হামলায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ইমরান।
ওই হামলার ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানান তিনি।
ভবিষ্যতে যে কোনো উস্কানির মুখেও শান্তিপূর্ণভাবে যুদ্ধাপরাধী নির্মূলের আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় জানান ইমরান এইচ সরকার।
শাহবাগে রাখা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের চেয়ারে বসা নিয়ে গত ৩ এপ্রিল রাতে দুই পক্ষের মারামারিতে জাগরণ মঞ্চের দুই কর্মী আহত হন।এ ঘটনার জের ধরে গণজাগরণ মঞ্চের মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কেন্দ্রীয় সংসদ।
এরইমধ্যে এক সংবাদ সম্মেলন করে গণজাগরণমঞ্চে দলাদলির জন্য মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে দায়ী করে পাঁচটি ছাত্রসংগঠনের নেতারা,যারা শুরু থেকেই আন্দোলনের পাশাপাশি জাগরণ মঞ্চে সংগঠকের ভূমিকায় ছিলেন।
বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ,বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন,বাংলাদেশ ছাত্র সমিতি ও ছাত্র ঐক্য ফোরামের কোনো নেতাকে এদিন জাগরণ মঞ্চের সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়নি।
তবে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের নেতারা ইমরানের সঙ্গে ছিলেন।