লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার প্রস্তুতি অনেক দিন ধরে নেয়ার পরও বুধবার স্বাধীনতা দিবসে মূল আয়োজনে কিছু অব্যবস্থাপনা চোখে পড়েছে।
Published : 26 Mar 2014, 11:00 PM
তার মধ্যেই বুধবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নানা বয়সী ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ মানুষ ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গেয়ে ২০১৩ সালে ভারতের সাহারা গ্রুপের রেকর্ড ভেঙে দেন।
সকাল সাড়ে ৬টায় আয়োজনের ভেন্যুর ফটক খুলে দেয়ার আগে থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে পায়ে হেঁটে এসে বাইরে জড়ো হতে থাকে মানুষ।
এতবড় আয়োজন সামলাতে হিমসিম খেতে দেখা গেছে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের।
সুশৃঙ্খলভাবে সাজানোর জন্য পুরো এলাকাকে ১৫টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিটি সেক্টরকে অনেকগুলো ব্লকে ভাগ করা হয়, যেগুলোতে ৫০ জন করে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা।
সবগুলো ব্লকে সেনাসদস্যদের মধ্য থেকে দেয়া হয় একজন করে ব্লক ম্যানেজার। নির্ধারিত প্রবেশ পথ থেকে ওই ব্লক ম্যানেজার তার নির্ধারিত ব্লকের অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে আসছিলেন।
প্রবেশপথ থেকে দেয়া হচ্ছিল খাবার। আর ব্লকে পৌছানোর পর ব্যাগ, ক্যাপ, সনদ, নির্দেশনা ও জাতীয় পতাকা দেয়া হচ্ছিল।
ব্লকে আগে থেকেই এ সব সামগ্রী রাখা ছিল। খালি মাঠে পড়ে থাকা এ সব সামগ্রী অনেকেই অতিরিক্ত ভেবে যে যেভাবে পারেন নিতে শুরু করেন।
এক পর্যায়ে সেক্টরগুলোতে নির্ধারিত প্রবেশপথের বাইরে দিয়েও অনেকেই ঢুকে ব্লকগুলোতে ঘোরাঘুরি করতে থাকেন। এ সময় তারাও খালি ব্লকগুলো থেকে নানা সামগ্রী নিতে শুরু করে।
পরে নির্ধারিত প্রবেশপথ দিয়ে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই তাদের ব্লকে এসে নির্ধারিত সামগ্রী না পাওয়ায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় এক পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকরা এ সব সামগ্রী বিতরণ বন্ধ করে দেন। ৯ নম্বর সেক্টরে স্বেচ্ছাসেবকদের হাত থেকে এসব সামগ্রী ছিনিয়ে নিতে দেখা গেছে অনেককে।
সকাল থেকে বিভিন্ন সেক্টরে জড়ো হওয়া এ সব নানা বয়সী মানুষের বসার ব্যবস্থা না থাকায় কিছুক্ষণের মধ্যে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়েন। আবার অনেকে ব্লক থেকে বেরিয়েও যান।
এ সময় শিশুদের ছোটাছুটিতে ধুলাবালি উড়ে পরিস্থিতি আরো খারাপ করে তোলে।
সকাল ১০টার পর থেকে রোদ চড়তে থাকলে অনেককে পিপাসার্ত হয়ে জরুরি চিকিত্সা সেবা কেন্দ্রে পানির জন্য ধরনা দিতে দেখা গেছে।
তবে সেখানে দায়িত্বরতরা পানি শুধু ‘অসুস্থদের জন্য’ বলে পানি দিতে রাজি হননি।
১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের না আনার নির্দেশনা থাকলেও অনেকে এর চেয়ে কম বয়সী শিশুদের নিয়েও এসেছিলেন।
রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দেখা যায়, যাদের বয়স নির্ধারিত সীমার কম।
ওই স্কুলের কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষক রাহেলা বেগম জানান, পঞ্চম শ্রেণীর অল্প কয়েকজন এসেছে। বাকিরা বয়সের নির্ধারিত সীমার চেয়ে বড়।
অনুশীলন পর্বেও ছিল বিশৃঙ্খলা। তবে মূলপর্ব শুরু হতে হতেই প্রায় সবাই নির্ধারিত ব্লকে ফিরে আসে। অনেকে আবার কাছাকাছি ব্লকে দাড়িয়ে এক নিষ্ঠতার সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীতে অংশ নেয়।
জাতীয় সংগীত শেষ হওয়ার পর পিপাসার্তদের অধিকাংশই উর্ধ্বশ্বাসে ছোটেন বের হওয়ার জন্য।
অনেকে আবার মূল মঞ্চের দিকে যান মিউজিক্যাল পারফরমেন্সে অংশ নিতে।
এ সময় ব্যাপক ধুলাবালি উড়তে থাকে, যা অংশগ্রহণকারীদের নতুন বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে পুরো আয়োজনে অংশ নিতে পেরে খুশিই দেখা গেছে অংশগ্রহণকারীদের।
এ রকমই একজন রোকেয়া বেগম বলেন, রোদে দাঁড়িয়ে, ধুলাবালি খেয়ে এখন চলতেই কষ্ট হচ্ছে।
“সব কিছুর মধ্যে সাস্ত্বনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরেছি। কষ্ট একটা সময়ে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এই সুখস্মৃতি জীবনভর থাকবে।”