যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত মতিউর রহমান নিজামীর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য প্রসিকিউটরদের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর।
Published : 09 Mar 2014, 09:44 PM
প্রসিকিউশনের কর্মকাণ্ড তত্ত্বাবধানে একটি দলও গঠন করে দিয়েছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন দলের মধ্যে বিরোধের খবর প্রকাশের পর রোববার দ্বিতীয় দফার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে দায়িত্ব ভাগ করে চিঠি দেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু।
চিঠিতে বলা হয়েছে,“উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে মামলাটি প্রসিকিউটর মোহম্মদ আলী (তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষী বিষয়ক) এবং ড. তুরীন আফরোজ (আইনি দিক) শুনানি করেছিলেন। এই পর্যায়ে শুনানি ওই একই ধারায় প্রসিকিউটরদ্বয়কে প্রজ্ঞানিবিষ্টভাবে, অত্যন্ত ও যত্নের সঙ্গে উপস্থাপনের জন্য অনুরোধ করা হলো।”
এতে আরো বলা হয়েছে,“একইসঙ্গে বিগত ৫-৩-২০১৪ তারিখের অফিস আদেশে ট্রাইব্যুনালসমূহে মামলাসমূহ পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউশন টিমকে পরামর্শ ও সহায়তার জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের পরামর্শ ও সহায়তা টিমকে দায়িত্ব দেওয়া হল শুনানি কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করার জন্য।”
পাঁচ সদস্যের এ পরামর্শ ও সহায়তা টিমের সদস্যরা হলেন- প্রসিকিউটর হায়দার আলী,রানা দাশগুপ্ত,জেয়াদ আল মালুম,সুলতান মাহমুদ সীমন ও মোখলেসুর রহমান বাদল।
রোববার বাংলা দৈনিক প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, নিজামীর মামলার শুনানি নিয়ে প্রসিকিউটর তুরীন আফরোজ ও মোহাম্মদ আলীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।
জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় দেয়ার আগে রোববার থেকে আবারো দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আসামিপক্ষের আবেদনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর নতুন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বুধবার এই আদেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত না হওয়ায় তাদের লিখিত যুক্ততর্ক জমা দিতে বলে গত ১৩ নভেম্বর নিজামীর মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমান রেখেছিল ট্রাইব্যুনাল।
এরপর ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টিএম ফজলে কবীর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে গেলে এই আদালতের বিচার কার্যক্রমে কার্যত স্থবিরতা তৈরি হয়।
সাবেক জোট সরকারের মন্ত্রী নিজামীর বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা,লুট,ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা,পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো ১৬টি অভিযোগ রয়েছে।
২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করার পর একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এরপর গত বছর ১১ ডিসেম্বর জামায়াতের আমিরের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উপস্থাপন করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। ২৮ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগ আমলে নেয়।
নিজামীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে একাত্তরের ডিসেম্বরে পাবনার বেড়া থানার বৃশালিকা গ্রাম ঘেরাও করে ৭০ জনকে গুলি করে হত্যা ও ৭২টি বাড়িতে আগুন দেয়া, ডেমরা ও বাউশগাড়ী গ্রামে ৪৫০ জনকে গুলি করে হত্যা, সাঁথিয়া উপজেলার করমচা গ্রামে মন্দিরের সামনে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের ঘটনাও রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশে বলা হয়, ১৯৪৩ সালে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্ম নেয়া নিজামী ১৯৬৩ সালে কামিল পাস করেন। জামায়াতের তখনকার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার প্রধান হিসাবে একাত্তরে তিনি ছিলেন আলবদর বাহিনীরও প্রধান।
স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর দমন-পীড়ন চালাতে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটিতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খানের জবানবন্দি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে গত বছর ২৬ অগাস্ট এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দেন মোট ২৬ জন।
আর নিজামীর পক্ষে তার ছেলে মো. নাজিবুর রহমানসহ মোট চারজন সাফাই সাক্ষ্য দেন। বাকি তিনজন হলেন- অ্যাডভোকেট কে এ হামিদুর রহমান, মো. শামসুল আলম ও আবদুস সলাম মুকুল।
সাক্ষ্য ও জেরা শেষে গত ৩ থেকে ৬ নভেম্বর প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। এরপর ৭ নভেম্বর থেকে চার দিন আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের জন্য দিন রাখা হলেও তারা নিজামীর আইনজীবীরা আসেননি।