আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিগত মহাজোট সরকার আমলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়েছেন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ২৬ জন, এর মধ্যে বহুল আলোচিত নুরুল ইসলাম হত্যামামলায় সাজাপ্রাপ্ত এ এইচ এম বিপ্লবও রয়েছেন।
Published : 05 Mar 2014, 06:47 PM
বিএনপি-জামায়াত জোট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারে শাসনামল মিলিয়ে তার আগের আট বছরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পান চারজন, যার মধ্যে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত মহিউদ্দিন ঝিন্টুর নাম ব্যাপক আলোচিত।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার সংসদে ২০০১ থেকে এই পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়া আসামিদের তালিকা তুলে ধরেন।
আদালতে দণ্ডিত কাউকে ক্ষমা করার অধিকার সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের উভয় দলের শাসনামলেই এর প্রয়োগ দেখা যায়।
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে এই পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় ফৌজদারি মামলায় সাজা পাওয়া ৩৩ ব্যক্তির সাজা মওকুফ বা কমানো হয়েছে। এদের মধ্যে ৩০ জন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত।
২০০৯ থেকে এই পর্যন্ত মোট ২৯ জনের সাজা মওকুফ হয়েছে, এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের ছেলে বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ নিয়ে আওয়ামী লীগকে ব্যাপক সমালোচনায় পড়তে হয়।
লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে হত্যার পর তার লাশ টুকরা টুকরা করে মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিল। ওই মামলায় বিপ্লবকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল বিচারিক আদালত।
মহাজোট সরকার আমলে যে ২৯ জনের সাজা মওকুফ বা কমানো হয়েছে, তার মধ্যে তিনজন বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের দেড় মাসে কোনো আসামি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাননি।
আগের আট বছরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার সবগুলোই ঘটেছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরে।
চারদলীয় জোট সরকার আমলে ক্ষমা পাওয়া ঝিন্টু ছিলেন সুইডেন বিএনপির নেতা। সূত্রাপুরের দুই ব্যবসায়ীকে হত্যার দায়ে এরশাদ আমলে সামরিক আদালতে তিনিসহ চারজনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল।
এর মধ্যে আবুল হাসনাত কামাল নামে একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ঝিন্টু ২০০৫ সালে দেশে ফেরার পর রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পান।
মহাজোট সরকার আমলে নাটোরের সাব্বির আহমদ গামা হত্যামামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ২০ জনকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করে দেয়াও বেশ আলোচনা তুলেছিল।
চারদলীয় জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি নাটোর নলডাঙ্গা রামশার কাজিপুর বাজারে খুন হন ওই সময়ের উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর ভাতিজা গামা।
এরপর বিচারিক আদালত যাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়, তারা সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী। আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ ছিল, তার দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ওই রায় ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ওই মামলায় দণ্ডিত যারা আওয়ামী লীগ সরকার আমলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পান, তারা হলেন-আনিসুর রহমান, মো. সেন্টু, মো. ফয়সাল, এম এ ফিরোজ, ফারুক শাহ, ফজলুল হক শাহ, জাহিদুল, শাহ জাহান আলী, মো. বাদল, আবদুল জলিল, মো. সোহাগ, এস এম ফকর উদ্দিন, সাজ্জাদ হোসেন, জহুরুল মেম্বার, মো. ফরমাজুল, আবুল হোসেন, আতাউর রহমান, আসাদ, অহিদুল।
গত ১৩ বছরে আর যাদের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করা হয়েছে, তারা হলেন- চাঁন মিয়া (মাদারীপুর), মো. বাবলু (রাজশাহী), মিন্টু ঘোষ (ঢাকা), আবদুল খালেক (ঠাকুরগাঁও), তালেবউদ্দিন (সুনামগঞ্জ),বেনজির আহমেদ (ঝিনাইদহ), ইসলাম উদ্দিন (কিশোরগঞ্জ), রাখাল চন্দ্র সাহা (কুমিল্লা) ও শিমন সিং (সিলেট)।
বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগের পর যাদের সাজা মওকুফ বা কমানো হয়েছে, তারা হলেন- সিরাজ মিয়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), আবদুল মান্নান (টাঙ্গাইল) ও আবদুল জব্বার (লক্ষ্মীপুর)।