সূ চির সঙ্গে বসছেন হাসিনা

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সূ চির সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নুরুল ইসলাম হাসিবসুমন মাহবুব ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2014, 03:11 PM
Updated : 4 March 2014, 12:21 PM

আগামী ৪ মার্চ মিয়ানমারের রাজধানী নে পি টোতে অনুষ্ঠেয় বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেকটরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনোমিক কো-অপারেশনের (বিআইএমএসটিইসি) সম্মেলনের আগের দিন তাদের এই বৈঠক হবে।

এটিই হবে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রতিবেশী দেশের নেত্রী সূ চির সঙ্গে শেখ হাসিনার প্রথম বৈঠক।

প্রায় ১৫ বছর গৃহবন্দী থাকার পর ২০১০ সালের নভেম্বরে মুক্তি পান সূ চি। তার দীর্ঘদিনের কারাবাসকে ১৯৬২ সাল থেকে সামরিক শাসনে থাকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের ‘প্রতীক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার বিকাল ৪টায় মিয়ানমারের পার্লামেন্টে হাসিনা-সূ চির বৈঠক হবে।

বিআইএমএসটিইসির তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে সোমবার সকালে নে পি টোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩২ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন তিনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটাই হবে তার প্রথম বিদেশ সফর।

প্রধানমন্ত্রীর সফর সূচি অনুযায়ী, মিয়ানমারের স্পিকার শুয়ে মানের সঙ্গে বৈঠকের পর সূ চির সঙ্গে আধা ঘণ্টার বৈঠক করার কথা শেখ হাসিনার।

মিয়ানমারের বিরোধী দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন সূ চি।

এছাড়া সম্মেলনের ফাঁকে ভারত, নেপাল ও ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের পাশাপাশি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

প্রতিবেশী দেশ হলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন রয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যও বছরে মাত্র ১০ কোটি ডলারের।

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে জাতিগত দাঙ্গার মধ্যে পালিয়ে আসা রোঙ্গিাদের আশ্রয় দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা হাজারের কোটায় থাকলেও অবৈধভাবে আরো কয়েক লাখ রোহিঙ্গা এদেশে রয়েছে বলে বিভিন্ন পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে।

রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় ততোটা সোচ্চার না হওয়ায় সূ চির সমালোচনাও রয়েছে।

১৯৯৭ সালে গঠিত বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেকটরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনোমিক কো-অপারেশনের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন ২০০৪ সালে ব্যাংককে এবং ২০০৮ সালে নয়া দিল্লিতে দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটানের এই জোটের এ অঞ্চলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, পর্যটন, কৃষি, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, আন্তঃযোগাযোগ, সন্ত্রাস ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কাজ করার কথা।

তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা গত শীর্ষ সম্মেলনের পর অর্জিত অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন। সংস্থার যৌথ অঙ্গীকারের বিভিন্ন দিক নিয়ে মতবিনিময় এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করবেন তারা।

শীর্ষ সম্মেলন শেষে ইশতেহার অনুমোদনের পাশাপাশি তিনটি বিষয়ে চুক্তি সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকায় সংস্থার স্থায়ী সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, ভারতে আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং ভুটানে কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিজ কমিশন ও কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিজ অবজারভেটরি প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঢাকায় সংস্থার স্থায়ী সচিবালয়ের জন্য ইতোমধ্যেই জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সম্মেলন শেষে ৪ মার্চই দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।