‘আন্দোলন থামিও না’

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির নামেই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এ মিলনায়তন। সেই মিলনায়তনে এক স্মরণসভায় এসে সাংবাদিক হত্যার বিচার চাইলেন দুই বছর আগে নিহত সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মুনীর; সাংবাদিকদের বললেন আন্দোলন চালিয়ে যেতে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2014, 07:31 AM
Updated : 11 Feb 2014, 06:05 PM

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বললেন, “আন্দোলন থামিও না, যতো সাংবাদিক মারা গেছে, সবার বিচারের দাবিতে তোমরা আন্দোলন চালিয়ে যাও।… আমি বিচার চাই, আমার মেঘের জন্য আমি বিচার চাই।”

এই অনুষ্ঠান থেকেই আগামী ৩১ মার্চ প্রতীকী অনশনের কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রয়োজনে আরো কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন সাংবাদিকরা।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে নিজেদের বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি। সরকারের বহু আশ্বাসের পরও এ হত্যাকাণ্ডের কিনারা হয়নি।

আর এ জন্য সরকারকেই অভিযুক্ত করেছেন সন্তান হারা মা সালেহা মুনীর। তার সন্দেহ, সাগর-রুনি হত্যার বিচার প্রক্রিয়া ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

“ফেব্রুয়ারি মাসটি শোকের। আমার কাছে ২১ ফেব্রুয়ারি আর ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকেনি। এটি আমার কাছে শহীদের মাস।”

উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে সাগরের মা বলেন, “মাঝখানে তোমরা আলাদা হয়েছিলে, এখন জানতে পারলাম তোমরা এক হয়েছ। শুনে আমি খুশি হয়েছি।… আমি খুব আশাবাদী বাবা , সাগর-রুনি হত্যার যেন বিচার হয়, সেজন্য আন্দোলন কর, প্রয়োজনে অনশন কর।”

সাগর-রুনির ছয় বছর বয়সী ছেলে মেঘ তার দাদীর কাছে জানতে চায়- কেন এতো অল্প বয়সে তার মাকে হারাতে হলো। এই মেঘের জন্যই সাংবাদিকদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেন সালেহা।

“আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, বিচার না হওয়া পর্যন্ত সাগর-রুনির কবর জিয়ারত করব না। আর কতোকাল আমাকে এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে তা আমি জানি না।

সাগরের সবচেয়ে প্রিয় ছিল কৃষ্ণচূড়া গাছ, সাগর-রুনির খুনিরা ধরা পড়লে আমি ওদের কবরের পাশে দুটো কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগিয়ে বলব, তোমাদের খুনিরা ধরা পড়েছে, ওদের শাস্তি হয়েছে।”

সালেহা বলেন, “অনেকেই রাস্তায় দেখে আমার কাছে জানতে চায়, আমাকে চেনা চেনা লাগে, আমি টিভিতে অ্যাড (বিজ্ঞাপন) করি কি না। আমি ছেলেহারা মায়ের অ্যাড করি।”

বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন সাগরের মা।

স্মরণসভায় মেঘকে কয়েকবার মাইকের সামনে আনা হলেও বারবার সে বলে, “আমি কিছু বলব না”।

একটি টেলিভিশনের একজন ক্যামেরা পারসন মেঘের ছবি নিতে গেলে সে বলে, “এটিএনের সাথে আমার আড়ি, ওরা দুষ্টু, আমি ওদের সাথে কথা বলব না।”

রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, নতুন কারো সাথে কথা হলে মেঘ এখন মোবাইল দিয়ে তার ভিডিও করে, প্রতিক্রিয়া জানতে চায়। সে জানতে চায়- সাংবাদিক হত্যার দুই বছর হলো, খুনিরা ধরা পড়েনি, এতে তাদের কেমন লাগছে।

“অনেক কষ্ট নিয়ে স্মরণসভায় এসেছি। ৪৮ ঘণ্টা এখন ২৪ মাস হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা বলে যাচ্ছে তারা রাতদিন পরিশ্রম করছে। তবে আমাদের মন মানছে না। আমাদের মনে হচ্ছে, বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে ফেলতে যেন চেষ্টা চলছে।

তেমন কোনো চেষ্টা হলে তা ঠেকাতে সবার সহযোগিতা চান রোমান।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শাহেদ চৌধুরী এই স্মরণসভায় ৩১ মার্চ ডিআরইউর সামনে দিনব্যাপী প্রতীকী অনশনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, “কেউ পাশে থাক আর না থাক, সাগর-রুনির হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে ডিআরইউ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।৩১ মার্চের মধ্যে দাবি আদায় না হলে কাফনের কাপড় পড়ে মিছিল, আমরণ অনশন ও রাজপথ অবরোধের মতো কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হব।

এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে সাগর-রুনিকে স্মরণ করার পর শেষ হয় এই স্মরণসভা।