জনপ্রতিনিধিদের সংবর্ধনা দিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।
Published : 27 Jan 2014, 03:51 PM
এই নির্দেশ না মানলে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেয়া হবে বলেও সোমবার এক আদেশে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠনের পর বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য শিক্ষার্থীদের রোদের মধ্যে রাস্তায় পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে এই আদেশ এলো।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনা নেয়ার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সোমবার মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়।”
ওই নির্দেশনার আলোকেই পরিপত্র জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পরিপত্রে বলা হয়, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও পদস্থ কর্মকর্তারা বিভিন্ন জেলা, উপজেলা বা বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে গেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ রেখে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে।
“এর ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ওপর বিরূপ শারীরিক ও মানসিক চাপ পড়ছে। বিষয়টি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
শিক্ষার সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে ‘সংবর্ধনার নামে’ শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করানো থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে পরিপত্রে।
পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘শিশুবান্ধব পরিবেশ’ নিশ্চিত করার স্বার্থে এ ধরনের ‘অনৈতিক কার্যক্রম’ পরিহারে সব মহলের সহযোগিতা চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
‘বিশিষ্টজনদের’ সম্মান জানাতে ক্লাস বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় না করাতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও।
সোমবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) আয়োজিত এক কর্মশালায় তিনি বলেন, “রোদ-বৃষ্টিতে শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজের বাইরে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখলে তাদের ক্লাসের যেমন ক্ষতি হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের তেমনি অনেক কষ্ট হয়।”
এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে বলেও স্বীকার করেন শিক্ষামন্ত্রী।
তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে অতিথিদেরকে সম্মান জানাতে যে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে বলে মত দেন নাহিদ।
তিনি বলেন, বিরোধীদলের হরতাল-অবরোধ এবং জ্বালাও-পোড়াওয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার বিশেষ ক্ষতি হয়েছে। তা কাটিয়ে উঠতে সকল মহলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কাসেম, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কাশেম মিয়া এ কর্মশালায় বক্তব্য দেন।
শিক্ষা বিভাগের নয় জন আঞ্চলিক উপ-পরিচালক, ৬৪ জেলার শিক্ষা অফিসার, ৬৪ জন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারাও এতে উপস্থিত ছিলেন।