একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার চেয়ারম্যান ও পলাতক বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রসিকিউশনের দুই সাক্ষী।
Published : 10 Dec 2013, 08:00 PM
বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মঙ্গলবার সাক্ষ্য দেন প্রসিকিউশনের দ্বাদশ সাক্ষী মো. হান্নান মুন্সি ও ত্রয়োদশ সাক্ষী রমেশ চন্দ্র রায়।
এদের দুজনের বাড়িই ফরিদপুরের নগরকান্দা থানার গোয়ালদী গ্রামে।
সাক্ষ্যে হান্নান মুন্সি বলেন, ১৯৭১ সালের ৩১ মে দুপুর দেড়টার দিকে জাহিদ হোসেন খোকন তার সহযোগী অন্যান্য রাজাকার ও পাক বাহিনীকে নিয়ে পশ্চিম দিক দিয়ে গোয়ালদী গ্রামে ঢোকে। গ্রামে ঢুকেই তারা তিনটি গুলি করে।
““গুলির শব্দ শুনে আমি ঘর থেকে বের হয়ে রাজাকার খোকন, আয়নাল, আতাহার ও পাকিস্তানি আর্মিদের আমাদের বাড়ির দিকে আসতে দেখি। এদের আসতে দেখে আমি আবার বাড়ির মধ্যে ঢুকে আব্বা, আম্মা, ছোটো দুই ভাই ও দুই বছরের ছোটো বোন বুলুকে নিয়ে বাড়ির পূর্ব পাশ দিয়ে বের হয়ে দক্ষিণ দিকের ঘোড়ামারা বিলের দিকে পালাতে থাকি।”
তিনি বলেন, তাদের পালাতে দেখে রাজাকার খোকন ও তার সঙ্গে আসা রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মিরা গুলি করে। গুলিতে তার মায়ের কোলে থাকা ছোটোবোন বুলু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
সাক্ষী জানান, মৃত ছোটোবোন বুলুকে নিয়ে তিনি বিলের ভেতর গিয়ে বসেন। সেখান থেকে দেখতে পান তাদের বাড়ি-ঘর জ্বলছে।
এরপর রাজাকাররা চলে গেলে বিলের পূর্বদিকে ঝাটুরদিয়া বড় ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি গিয়ে বোনের লাশ মাটিচাপা দেন।
হান্নান মুন্সি জানান, ঘোড়ামারা বিল থেকে বাড়ি ফেরার সময় একই গ্রামের রমেশ চন্দ্র (ত্রয়োদশ সাক্ষী) রায়ের সঙ্গে তার দেখা হয়। রমেশ জানায়, রাজাকার খোকন ও পাকিস্তানি আর্মিরা তার ঠাকুরদা রাজেন্দ্র চন্দ্র রায়কে পাটক্ষেতে গুলি করে হত্যা করেছে।
সাক্ষ্য দেয়া শেষ হলে পলাতক জাহিদ হোসেন খোকনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুশ শুকুর খান জেরা করেন এ সাক্ষীকে। জেরা শেষ করলে সাক্ষ্য দেন প্রসিকিউশনের ত্রয়োদশ সাক্ষী রমেশ চন্দ্র রায়।
তিনি ট্রাইব্যুনালকে জানান, সেদিন (১৯৭১ সালের ৩১ মে) খোকন রাজাকারসহ অন্যান্য রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মিদের গ্রামের দিকে আসতে দেখে তিনি বাড়ির পূর্ব পাশের তালবাগানে গিয়ে লুকিয়ে থাকেন। এসময় তার ঠাকুরদা রাজেন্দ্র চন্দ্র রায় পাটক্ষেতে পালাতে গেলে খোকন রাজাকার ও পাক সেনারা তাকে গুলি করে হত্যা করে।
গুলির শব্দ পাট ক্ষেত থেকে শুনতে পেয়েছিলেন বলেও ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করেন রমেশ চন্দ্র।
তিনি বলেন, সেখান থেকেই তিনি গ্রামের বাড়িঘর দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখেন। আগুন নিভে গেলে বাড়িতে এসে দেখেন তার ঠাকুরদার মৃতদেহ পাটক্ষেতে পড়ে আছে। এরপর স্থানীয় শ্মশানঘাটে মৃতদেহ মাটিচাপা দেয়া হয়।
উভয় সাক্ষীই তাদের সাক্ষ্যে উল্লেখ করেন যে, তারা খোকন রাজাকারকে দুজনই খুব ভালভাবে চিনেন।
সাক্ষ্য দেয়া শেষ হলে এ সাক্ষীকেও জেরা করেন আইনজীবী আব্দুর শুকুর খান। এরপর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য বুধবার দিন ধার্য করে আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়।