মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে আপিল বিভাগের দেয়া ফাঁসির রায়ের অনুলিপি এ মামলার বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পৌঁছেছে।
Published : 08 Dec 2013, 11:34 AM
ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী জানান, রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি তাদের হাতে এসে পৌঁছায়।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায়ের সাথে যে ধরনের নির্দেশনা দেয়া হবে, আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নেব। আমরা প্রস্তুতি আছি।”
প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ গত ১৭ সেপ্টেম্বর এই রায় ঘোষণা করে। বিচারকদের স্বাক্ষরের পর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা বৃহস্পতিবার এই রায় প্রকাশ করে।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের সমন্বয়ক এম কে রহমান ওইদিন বলেছিলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আব্দুল কাদের মোল্লার দণ্ড বাস্তবায়নের দিনক্ষণ সরকারের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে।
“আইন অনুসারে সরকারের সিদ্ধান্তে এই রায় বাস্তবায়ন হবে। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার চাইলে জেল কোড অনুসরণ করতে পারে।…তবে জেল কোড অনুসরণের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সরকার চাইলে ভিন্ন কোন সিদ্ধান্তও নিতে পারে।”
অবশ্য জামায়াত নেতার আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, রায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কারাবিধি অনুসরণের বিকল্প নেই। রায় পর্যালোচনার (রিভিউ) আবেদন করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি; যদিও প্রসিকিউটররা বলছেন, এর কোনো সুযোগ নেই।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, দ্রুত এই রায় বাস্তবায়ন করা হবে।
এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা শফিক আহমদ গত বৃহস্পতিবার বলেন, “রায় এখনো ট্রাইব্যুনালে যায়নি। রায় সেখানে যাওয়ার পর প্রসিকিউশন টিমের পরামর্শক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
কাদের মোল্লা গাজীপুরের কাশিমপুরর কারাগারে ছিলেন, রায়ের পর তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। উপ-কারা মহাপরিদর্শক গোলাম হায়দার সেদিন জানান, রায়ের অনুলিপি হাতে পেলে তারা জেল কোড অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
সাধারণ মামলায় বিচারিক আদালত কোনো আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিলে দণ্ডাদেশ কার্যকরের জন্য জন্য হাই কোর্টের অনুমোদন লাগে। এক্ষেত্রে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আপিলের সুযোগও রয়েছে।
তবে আপিল না করলেও ওই দণ্ড কার্যকরে হাই কোর্টের অনুমোদন লাগে। হাই কোর্টে নিষ্পত্তির পর আসামি আপিল বিভাগে লিভ পিটিশন দায়ের করতে পারেন।
তবে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনালই হাই কোর্টের সমমর্যাদা সম্পন্ন। ওই আইন অনুসারে ট্রাইব্যুনালের যে কোনো দণ্ডের বিরুদ্ধে উভয় পক্ষ আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল করতে পারেন।
সাধারণ ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে আবেদন না করলে হাই কোর্ট মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে অনুমোদন দেয়ার পর মৃত্যুদণ্ডের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
চূড়ান্ত নিষ্পত্তির রায় এক্ষেত্রে আদালতের আদেশ বিচারিক আদালতে পৌছার পর ওই আদালত মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে।
কারা বিধিতে বলা আছে, প্রত্যেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করার অধিকার থাকবে। যার সঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদও একমত পোষণ করেছিলেন।
কারা বিধি অনুসারে কোনো মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর জেল সুপার তা বন্দিকে জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে তার মত চাইবেন। ক্ষমা প্রার্থনার জন্য আসামির সর্বোচ্চ সময় সাতদিন।
ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনে রাষ্ট্রপতি ও সরকার উভয়কে সম্বোধন করতে হবে। আবেদন পাওয়ার পর জেল সুপার তা স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে পাঠাবেন। সঙ্গে পৃথক পত্রে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সম্ভাব্য তারিখ এবং আসামির দণ্ডের বিষয়ও থাকবে।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে পাঁচটি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। যে একটি অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল বিচারিক আদালত, আপিলের রায়ে তাতে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে। অন্য চারটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের শাস্তিই বহাল রাখা হয়েছে। আর ছয় নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশের বদলে আপিল বিভাগ দিয়েছে সর্বোচ্চ সাজার আদেশ।
৭৯০ পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়, ষষ্ঠ অভিযোগে ৪:১ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো। মৃত্যু পর্যন্ত তাকে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।