রামপাল তাপ বিদ্যুত প্রকল্পে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদন নাকচ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 06 Oct 2013, 02:25 PM
বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান রোববার এই আদেশ দেয়।
এর আগে হাই কোর্টের আরেকটি বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি এই আবেদন শুনতে বিব্রতবোধ করেন।
আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী, মো. একলাস উদ্দিন ভূঁইয়া, মাহবুবুল ইসলাম, সৈয়দা শাহিন আরা লাইলী নামে চার আইনজীবী গত সপ্তাহে এই রিট আবেদন করেন।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং শনিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।
আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস।
সমরেন্দ্রনাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই রিটের ‘কোনো মেরিট নেই’ যুক্তি দেখিয়ে আদালত আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে।
মনজিল মোরসেদ বলেন, “আদালত বলেছে, দাখিলকৃত কাগজপত্রে এমন কোনো বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন নেই, যাতে ক্ষতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। সে কারণে আবেদন না-মঞ্জুরযোগ্য।”
এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানান এই আইনজীবী।
“আমরা সংবাদপত্রের প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট করেছিলাম। আমরাতো নির্দেশনার জন্যই আদালতে গিয়েছিলাম। এ কারণেই আমরা আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি “
মনজিল মোরসেদ জানান, রামপাল প্রকল্পে ক্ষতি হবে কি-না, তা নির্ধারণের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান পরিবেশবিদ এবং জীব-বৈচিত্র ও ইকোসিস্টেম বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করে প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য আদেশ চাওয়া হয়েছিল রিটে।
ওই বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত বিদ্যুত প্রকল্পের কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা চাওয়া হয়েছিল।
গত বুধবার বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদের বেঞ্চে রিটটি শুনানির জন্য উঠলে কনিষ্ঠ বিচারপতি বিব্রতবোধ করেন। পরে নিয়ম অনুসারে তা প্রধান বিচারপতির দপ্তরে যায়।
প্রধান বিচারপতি রিটটি শুনানির জন্য এম মোয়াজ্জাম হোসেন নেতৃত্বাধীন আদালতে পাঠায়।
এই রিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিকল্পনা সচিব, পরিবেশ সচিব, জ্বালানী ও বিদ্যুত সচিব, নৌ-পরিবহন সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালককে বিবাদী করা হয়।
রিট দায়েরের পর মনজিল মোরসেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমরা একের পর এক খবর পাচ্ছি, ওই এলাকায় বিদ্যুতকেন্দ্র হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে। পরিবেশের ক্ষতি হবে না বলেও একদল বলছে। সাধারণ দৃষ্টিতে আমারও মনে হয়, সেখানে বিদ্যুত কেন্দ্র হলে সেটা পরিবেশের জন্য ক্ষতি হবে। কিন্তু আমরা কেউ এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই।”
তিনি বলেন, সুন্দরবন বাংলাদেশের গৌরব, বিশ্ব ঐতিহ্যেরও অংশ। এ বন ধ্বংস হয়ে গেলে আর ফিরে পাওয়া যবে না।
“তাই সুন্দরবনের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাবও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। এ জন্যই আমরা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের জন্য আবেদন করেছি। সেই কমিটি রিপোর্ট না দেয়া পর্যন্ত প্রকল্পের কাজে স্থিতাবস্থা চেয়েছি।”
রিটে এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের পাশাপাশি এ সংক্রান্ত দুটি রায়ও সংযুক্ত করে বাদীপক্ষ।
এর মধ্যে আপিল বিভাগের একটি রায়ে বলা হয়েছে, মানুষের জীবন আইনের চেয়েও বড়। আর পরিবেশের ক্ষতি হলে সেটা মানুষের জীবনকেও বিপন্ন করবে। আর হাই কোর্টের অন্য একটি রায়ে বলা হয়েছে, উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি পরিবেশও রক্ষা করতে হবে।
রামপালে বিদ্যুত প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর আগেই এ নিয়ে কয়েকটি রিট হয়েছিল। হাই কোর্টের আদেশে প্রকল্পের কাজ ঝুলেও গিয়েছিল।
মনজিল মোরসেদ বলেন, রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন না দিতে ওই রিটগুলো দায়ের করা হয়েছিল। প্রকল্পের অনুমোদন ও কাজ শুরুর পর সেসব রিট অকার্যকর হয়ে গেছে। এ কারনেই নতুন করে এই রিট আবেদন।