গোলাম আযমের ৯০ বছর কারাদণ্ডের রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
Published : 15 Jul 2013, 12:32 PM
সোমবার রায় দেয়ার পরপরই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন একদল মুক্তিযোদ্ধা।
যুদ্ধাপরাধীদের হোতা গোলাম আযমের ফাঁসির রায় হবে বলে প্রত্যাশা ছিল তাদের, রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভের সময়ও এদের অনেকের চোখে ছিল জল।
বিক্ষোভের সময় গোলাম আযমের আত্মীয় হামজা মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে এসে বলেন, আদালত রায় দিয়েছে, এই রায় মেনে নিতে হবে।
এই সময় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা হামজাকে চড়থাপ্পড় মারলে পুলিশের সহযোগিতায় তিনি উদ্ধার হয়ে ট্রাইব্যুনালে ঢুকে পড়েন।
এতে পুলিশের ওপর উষ্মা প্রকাশ করেন ৯ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান সরদার।
“মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছে বলেই তোমরা পুলিশ হতে পেরেছ। কিন্তু রাজাকারের আত্নীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে এসে বিদ্রুপ করলে তোমরা চুপ মেরে থাক। তোমাদের আমরা ধিক্কার জানাই।”
ষাটোর্ধ্ব এই মুক্তিযোদ্ধা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায় সঠিক হয়নি।
“এটা কেমন রায় হলো যে গোলাম আযমের ফাঁসি হল না। আমি কিছুতেই এ রায় মানতে পারব না,” চিৎকার করে বলতে থাকেন তিনি।
১১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান সরকার বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, মুক্তির সংগ্রাম সফল হয়নি। স্বাধীন দেশে আমরা ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হলাম।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই মুক্তিযোদ্ধাও বলেন, “এটা আমরা মানতেই পারছি না। এমন অবিচার আমাদের প্রাপ্য না।”
যুদ্ধাপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দিতে ইউরোপ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক মামা বলেন, “আমরা সঠিক রায় পাইনি।”
প্রত্যাশিত রায় আনতে দেশবাসীকে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান তিনি।
২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ দাস নিজের ডান পা দেখিয়ে বলতে থাকেন, দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে পায়ে গুলি খেয়েছি।
হাত দেখিয়ে বলতে থাকেন, হাত ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে।
“চোখের সামনে স্বজনদের মৃত্যু দেখতে হয়েছে। তারপরও কাউকে কোনোদিন কোনো অভিযোগ করিনি। এবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে হৃদয়।”
“রায়ে আমরা ভীষণ কষ্ট পেয়েছি,” বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন যুদ্ধাহত এই মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান উপস্থিত তরুণদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা কয়েক বছরের মধ্যেই মারা যাব। বাবারা, তোমরা দেশটাকে রক্ষা কর।
“স্বাধীনতার শত্রুদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা তোমাদের ভাল থাকতে দেবে না, তারা তোমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে বলতে থাকবে-তোমরা কেন স্বাধীনতার কথা বল।”
রায়ের পর ধীরে ধীরে ট্রাইব্যুনালের প্রবেশ পথে ভিড় কমে যেতে শুরু করলে হতাশ হৃদয়ের এই মুক্তিযোদ্ধারাও ধীরে ধীরে চলে যান। যাওয়ার সময় একে অন্যকে সান্ত্বনাও দেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা।