হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী তার আটক হওয়ার গুজবের ফলে সৃষ্ট সংঘর্ষে প্রাণহানির মধ্যে হাটহাজারী পৌঁছলেও আটক হয়েছেন তার সংগঠনের নেতা জুনাইদ বাবুনগরী।
Published : 06 May 2013, 09:28 AM
সোমবার রাতে হেফাজতে ইসলামীর মহাসচিব বাবুনগরীকে আটক করে পুলিশ। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল আলম মাদ্রাসার মুহাদ্দিস। ওই মাদ্রাসারই মহাপরিচালক আহমদ শফী।
এর আগে সন্ধ্যায় বিমানে করে চট্টগ্রাম রওনা হন আহমদ শফী, পুলিশ পাহারায় তাকে লালবাগ থেকে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নেমে তিনি গাড়িতে করে হাটহাজারী যান।
রোববার ঢাকা অবরোধের পর মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশে আহমদ শফীর যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি সেখানে যাননি। তবে বাবুনগরী ছিলেন সমাবেশে।
হেফাজতকর্মীরা সরকারের আহ্বান উপেক্ষা করে শাপলা চত্বরে টানা অবস্থানের ঘোষণা দিলে সোমবার ভোররাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদের তুলে দেয়। এতে হতাহতও হয় কয়েকজন।
এরপর শফী আহমদ, বাবুনগরীসহ হেফাজত নেতারা লালবাগে সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে ছিলেন। সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে সোমবার দুপুরে শফীকে আটকের গুজব ছড়ায়।
বেলা সোয়া ৩টার দিকে পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে আহমদ শফী লালবাগ থেকে লাল রঙের একটি গাড়িতে চড়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রওনা হন।
হেফাজত আমিরকে আটক করা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে সেখানে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার হারুনুর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, "হুজুরের গাড়িতে কি কোনো পুলিশ দেখেছেন? এখান থেকে তিনি এয়ারপোর্টে যাচ্ছেন। তিনি মনে হয় বাড়ি যাচ্ছেন।"
তবে হেফাজত কার্যালয়ে পুলিশের উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দেননি তিনি।
বিমানবন্দরের আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন জানান, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা ছাড়েন আহমদ শফী।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজের এক্সিকিউটিভ (এয়ারপোর্ট) আহসান হাবীব জানান, তাদের চট্টগ্রামগামী ফ্লাইটে হেফাজতে ইসলামের পাঁচজনের টিকিট কাটা হয়।
আহমদ শফী ছাড়াও এ ফ্লাইটে যান তার ছেলে আনাস আহমদ, আল্লামা সাইফুল্লাহ, তাওহীদ ও হোসেইন আহমেদ।
সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন হেফাজত আমির।
পতেঙ্গা থানার ওসি কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে আহমদ শফী হাটহাজারী রওনা হন।
আহমদ শফী রাত সাড়ে ৯টায় হাটহাজারী মাদ্রাসায় পৌঁছান বলে হেফাজত নেতারা জানান।
এদিকে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, হেফাজতের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীকে রাতে লালবাগের ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে হেফাজতের ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য মো. ফারুক আহমেদ দাবি করেছেন, পুলিশ ‘কৌশলে’ বাবুনগরীকে বের করে গ্রেপ্তার করেছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বড় হুজুরকে যেভাবে বের করে চট্টগ্রামের পাঠানো হয়েছে। বাবুনগরী হুজুরকেও পুলিশ বলেছে, আপনার বিমানের টিকিট করা হয়েছে, আপনিও চলে যান। এই বলে লালবাগের কাযার্লয় থেকে বের করা হয়।”
“একটি ভাড়া করে গাড়িতে করে যাওয়ার পথে বাবুনগরী হুজুরকে ঢাকেশ্বরীর কাছ থেকে আটক করা হয়।”
১৩ দফার দাবিতে হেফাজত ঢাকা অবরোধের আগের দিনও লালবাগের কাযার্লয়ে সংবাদ সম্মেলনের জুনাইদ বাবুনগরী উপস্থিত ছিলেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
রোববার ঢাকা অবরোধের পর রাজধানীর পল্টন, বিজয়নগর, মতিঝিল এলাকায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতকর্মীরা। এরপর মতিঝিলে অবস্থানের ঘোষণা দেয় তারা।
সরকারের বারবার আহ্বানেও হেফাজতকর্মীরা অবস্থান না ছাড়ায় সোমবার ভোররাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদের তুলে দেয়।
ওই সময় হেফাজত নেতারা সবাই ছিলেন লালবাগে সংগঠনের কার্যালয়ে, আর তা ঘিরে ছিলো র্যাব ও পুলিশ। দুপুরে পুলিশের একটি দল কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে আহমদ শফীর সঙ্গে কথা বলেন।
বিকালে তাকে যখন পুলিশ কর্মকর্তারা গাড়িতে তুলে দিয়েছিলো, তখন হেফাজতের নেতাকর্মীরা জোরে জোরে দোয়া পড়তে থাকেন।
৫৭, কাজী রেয়াজউদ্দিন রোডের যে ভবনে শফী ছিলেন, তা মূলত বিএনপির শরিক ইসলামী ঐকজোটের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। চট্টগ্রামভিত্তিক হেফাজতে ইসলামও এ ভবনকে তাদের ঢাকা শাখার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে।