পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে পুরানা পল্টন ও বিজয় নগরে বহু ভবন ভাংচুর এবং আগুন দিয়েছে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা, পুড়িয়েছে অর্ধশতাধিক গাড়ি।
Published : 05 May 2013, 03:40 PM
মতিঝিলের সমাবেশমুখী হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে রোববার দুপুরে গুলিস্থানে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে, এরপরই পল্টন ও বিজয় নগর এলাকায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতকর্মীরা।
এরপর থেকে রাত পর্যন্ত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ভবন, হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ভবনসহ পল্টন এলাকার অনেক ভবনে ভাংচুর চালানো হয়। আগুন দেয়া হয় ভবনের নিচে থাকা গাড়িগুলোতে।
ফকিরাপুল থেকে পল্টন পর্যন্ত ফুটপাতের অসংখ্য দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে হেফাজতকর্মীরা। দমকলকর্মীরা গিয়েও সংঘর্ষের কারণে কাজ করতে পারেনি। ফলে রাত ১০টায়ও অনেক স্থানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
বিকালে সিপিবির ভবনে (মুক্তি ভবন) হামলা হয়। ভবনের ফটক ভেঙে নিচতলার দোকানগুলোতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া ঢিল ছুড়ে ভবনের পাঁচ তলা পর্যন্ত সামনের কাচগুলোও ভেঙে ফেলা হয়।
মুক্তি ভবনের নিচে গ্যারেজে থাকা ছয়টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। ভবনের সামনের ফুটপাতে বইয়ের দোকানসহ সবগুলো দোকানে আগুন দেয় হামলাকারীরা।
সিপিবি ভবনে আগুন দেয়ার খবর শুনে ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা গাড়ি নিয়ে সেখানে যান। কিন্তু সংঘর্ষের কারণে পৌঁছানো যাচ্ছিলো না বলে বাহিনীর কর্মকর্তা মো. মহসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
সন্ধ্যার পর সিপিবি কার্যালয়ের পূর্ব পাশে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ভবনের সামনের পরিবহন পুলের অন্তত ৩০টি সরকারি গাড়িতে হেফাজতকর্মীরা আগুন দেয়। এছাড়া স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে থাকা গাড়িগুলোতেও আগুন দেয় তারা।
হাউজ বিল্ডিংয়ের সামনের ফুটপাতের দোকানগুলোতে লাগা আগুন ভবনের নিচতলার দোকানেও ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ পল্টন থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিলে রাত সাড়ে ৮টার সময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে।
তখন গিয়ে দেখা যায়, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনের এবং পশ্চিমে মার্কেটে সংলগ্ন ফুটপাতের সকল দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। উত্তর ফটকের বিপরীত পাশে আজাদ প্রডাক্টস, ঢাকা ডাইংসহ বেশ কয়েকটি দোকানও পুড়েছে।
বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকের সামনে ফুটপাতের বইয়ের যে দোকানগুলো ছিলো, তার মধ্যে অনেক দোকানে কুরআন শরিফসহ ধর্মীয় বিভিন্ন গ্রন্থও ছিলো।
‘ভাই গো কী কমু, সব শ্যাষ’
ফুটপাতে তালা চাবি ও গৃহসজ্জার সামগ্রীর দোকানি আক্তার হোসেনকে রাত ১১টার দিকে দেখা যায় ভাংচুর ও আগুন থেকে মোটামুটি রক্ষা পাওয়া জিনিসগুলো সরাতে।
বায়তুল মোকাররমের নিচতলায় তিনি যখন এই কাজ করছিলেন, তখন তাণ্ডব থেমে এসেছে।
ক্ষয়ক্ষতি কী রকম- জিজ্ঞাসা করতেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আক্তার বলেন, “ভাইগো কী কমু.... আমার সব শেষ হইয়া গেছে।”
নয় বছর ধরে ব্যবসা চালালেও এই ধরনের হামলা আগে কখনো হয়নি বলে জানান তিনি।
“আমার সাড়ে চার লাখ টাকার সব মাল শেষ হয়ে গেছে। মনকে সান্ত্বনা দিতেই অল্প পোড়া তালাগুলো আলাদা করছি। কিন্তু এগুলো ভাঙারির দোকানে বিক্রি করা ছাড়া মনে হয় আর কিছু করা যাবে না।”
পাশের হার্ডওয়্যারের দোকানি বাচ্চু আর মানি ব্যাগের দোকানি হামিদ জানান, তাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে হামিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটা মানিব্যাগও নাই। আমার ৫ লাখ টাকার মূলধন ছাই হয়ে গেলো রে। পোলাপানের স্কুল খরচ কীভাবে দিবো? কীভাবে দিবো বাসাভাড়া?”
ওয়াসার পরিচ্ছন্নতাকর্মী উজ্জ্বল ও হানিফকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পল্টন মোড়ে টিয়ার গ্যাসের খোসা সংগ্রহ করতে দেখা যায়। থরে থরে পড়ে থাকা ভাঙা ইটের মাঝ থেকে খোসা কুড়িয়ে বড় একটি বস্তায় ভরছিলেন তারা।
১০ মিনিটে বস্তায় এক তৃতীয়াংশ ভরে যায় খোসায়। উজ্জ্বল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ভাঙারির দোকানে বিক্রির জন্য তিনি এসব কুড়াচ্ছেন।