যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সহিংস ‘প্রতিরোধ’কে সমর্থন দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, এ ট্রাইব্যুনালের সব রায়ই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
Published : 01 Mar 2013, 01:24 PM
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ বন্ধ করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে শাহবাগের বিক্ষোভকারীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের প্রতি এই দাবি বিবেচনায় নিয়ে রায় দেয়ার আহ্বান জানান।
এ পরিস্থিতিতে ট্রাইব্যুনালের কোনো বিচারকের পক্ষে ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে’ বিচারকাজ পরিচালনা বা রায় দেয়া সম্ভব নয় মন্তব্য করে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “তাই এই ট্রাইব্যুনালের যে-কোনো রায়ই এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।”
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি শুরু থেকে বলে আসছে, তারা ‘স্বচ্ছ বিচার চায়। যুদ্ধাপরাধে জামায়াতের পাশাপাশি বিএনপিরও দুই নেতা আব্দুল আলীম ও সালাউদ্দিন কাদেরের বিচার চলছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম দল জামায়াতে ইসলামী এই বিচারের বিরোধিতা করে আসছে। ট্রাইব্যুনাল বাতিল এবং জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবিতে তারা কয়েকটি হরতালও ডেকেছে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবনের রায় প্রত্যাখ্যান করে তার ফাঁসির দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে আন্দোলন শুরু হয়। প্রথমে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক নামে একটি সংগঠন আন্দোলনের ডাক দিলেও তাতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের লাখো মানুষ যোগ দেয়।
এদিনও ‘স্বচ্ছ’ বিচারের দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “এই বিচার প্রক্রিয়া, ট্রাইব্যুনাল ও আইন নিয়ে শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ব্যাপক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে।”
খালেদা জিয়া বলেন, “বিচার প্রক্রিয়ার ওপর বিক্ষোভের চাপ প্রয়োগকে সমর্থন করে, জাতিকে বিভক্ত করে সংঘাতের পথে ঠেলে দিয়ে এবং নিজের দেশের নাগরিকদের ওপর বর্বর হত্যাকাণ্ড চালিয়ে এই সরকার ক্ষমতায় থাকার সকল নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছে।”
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশ আরো ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের দিকে যাবে মন্তব্য করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।
২০১০ সালে যাত্রা শুরু করা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তিন জনের রায় ঘোষণা করেছে। প্রথাম রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদের ফাঁসি, দ্বিতীয় রায়ে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন এবং তৃতীয় রায়ে নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সাঈদীর রায়ের পর বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। অন্যদিকে রায় প্রত্যাখ্যান করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা শুরু করে জামায়াতের নেতাকর্মীরা, যে দলটি একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল।
বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে বহু মানুষ হতাহত হয়। বিভিন্ন স্থানে হামলা হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরেও।
এই সহিংসতাকে ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ’ উল্লেখ করে তাতে সমর্থন থাকার কথাও জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “গত কয়েক দিনের ভয়াবহ সংঘাতে যারা জীবন দিয়েছে, আমি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। এই সব নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সুবিচারের দাবিতে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করছি।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর,স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, জমির উদ্দিন সরকারসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।