ঢাকা, জুলাই ২২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আলোকচিত্রী, চিত্রগ্রাহক ও সাংবাদিক আশফাক মুনীর (মিশুক মুনীর) ফিরে এলেন তার নিজের তোলা আলোকচিত্রে আর কর্মময় জীবনের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্নের ভেতর দিয়ে।
রোববার বিকালে ধানমন্ডির ঢাকা আর্ট সেন্টারে ‘মিশুকের চোখে মিশুককে দেখা’ শীর্ষক এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে ফিরে এলেন মিশুকের তিন দশকের বন্ধু আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, যার অধিকাংশ ছবিতে মিশুক মুখ্য চিত্রগ্রাহক হিসাবে কাজ করেছেন।
গত বছরের ১৩ অগাস্ট তারেক মাসুদের নতুন ছবি ‘কাগজের ফুল’র জন্য লোকেশন দেখে ঢাকা ফেরার পথে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দুজনের।
মিশুকের মৃত্যুর বছরপূর্তিকে সামনে রেখে আয়োজিত প্রদর্শনীতে তাই মিশুকের সঙ্গে অবধারিতভাবেই উঠে এলেন তারেক মাসুদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রদর্শনীর মূল সমন্বয়কারী মিশুকের স্ত্রী মঞ্জুলী কাজী বলেন, “১৩ অগাস্ট যারা নিহত হয়েছেন আজ আমরা তাদের সবার কথা স্মরণ করছি। কিন্তু মিশুককে আজ এভাবে স্মরণ করতে হবে, সেটা ভাবিনি।”
মিশুক মুনীর কিংবা তারেক মাসুদের মতো আর কাউকে যেন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করতে না হয় তার জন্য সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “আমরা কেউই আর প্রিয়জন-বন্ধু হারাতে চাই না।”
আর প্রদর্শনীটিকে তিনি মিশুকের ‘জীবন আর জীবন দেখাকে তুলে ধরার প্রয়াস’ হিসাবে অভিহিত করেন মঞ্জুলী কাজী।
এই বছর মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়ায় তিনি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বাবার আলোকচিত্র সম্পর্কে মিশুক মুনীরের ছেলে নাঈম সিবাস্টিয়ান মুনীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি নিজেও এর আগে আমার বাবার স্টিল ফটোগ্রাফির কাজ দেখিনি। কারণ আমি যখন বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই তিনি মুভি ক্যামেরায় কাজ করেন।
“ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে বাবার তোলা ছবির কয়েকটি রিল খুঁজে পাই। তখনই আমি আর মা সিদ্ধান্ত নিই, বাবার এই কাজগুলোকে সবার সামনে তুলে আনব।”
প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ১৯৮২ সালে নির্মাণ শুরু হওয়া তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর জুটির প্রথম প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’র কয়েকটি দুর্লভ স্থিরচিত্র। এখানে চোখে পড়ে শিল্পী এস এম সুলতানের বিচিত্র জীবন, তার বিখ্যাত ছবি ‘প্রথম বৃক্ষরোপণ’ আঁকার দৃশ্য।
এছাড়া মিশুকের ক্যামেরায় উঠে এসেছে পটুয়া কামরুল হাসানের কিছু দুর্লভ ছবি, বন্ধু তারেক মাসুদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ কিছু মুহূর্ত, নদীতে-নৌকায়-জনপদে টুকরো টুকরো জীবনের ছবি।
একই সঙ্গে প্রদর্শনীতে সম্প্রচার মাধ্যমে মিশুক মুনীরের কাজ, চিত্রগ্রাহক হিসাবে কাজ করেছেন এমন কয়েকটি চলচ্চিত্রের টুকরো টুকরো অংশ নিয়ে তৈরি ৩০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্রও দেখানো হয়।
আদম সুরতের পর মিশুক মুনীর চাক্কি (১৯৮৪), ঢাকা টোকাই (১৯৮৫), কৃষ্ণনগরে একদিন (১৯৯৩), ঢাকা রিকশা (১৯৮৫), সোনারগাঁর কথা (১৯৯৮), ওয়ার ক্রাইমস ফাইল (১৯৯৫), মুক্তির কথা (১৯৯৯), কানসাটের পথে (২০০৮), নরসুন্দর (২০০৯) ও রানওয়ে (২০১০) চলচ্চিত্রে চিত্রগ্রাহক হিসাবে কাজ করেন।
প্রামাণ্যচিত্র ‘অন্য চোখে বাংলাদেশ’র কাজ শুরু করলেও তা শেষ করে যেতে পারেননি তিনি।
প্রদর্শনীর উদ্বোধক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “আমার চোখের সামনে মিশুকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তাকে নিয়ে এরকম একটি আয়োজন একই সঙ্গে অনন্দদায়ক ও তৃপ্তিকর। আজকের এই প্রদর্শনী আমাদের কাছে এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে মিশুক আর তার কাজকে তুলে ধরবে।”
প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত।
মিশুক মুনীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতাও করেন। একুশে টেলিভিশন চালু হওয়ার সময় হেড অব অপারেশন্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, চ্যানেল ফোর ও সিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরা অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। ২০১০ সালে দেশে ফিরে এটিএন নিউজের সিইওর দায়িত্ব নেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএমআর/এমআই/২২৪৪ ঘ.