রংপুরের বদরগঞ্জে সালিশের মাধ্যমে গৃহবধূ নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগে চার জনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট বলেছে, এ ধরনের সালিশ-ব্যবসা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ব্যর্থ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে পুলিশের বিরুদ্ধেও।
Published : 31 Jul 2011, 08:40 AM
আদালতের তলবে বদরগঞ্জের চার জন রোববার আদালতে হাজির হলে তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তাদের গ্রেপ্তার করে।
রংপুরের বদরগঞ্জে সালিশ বৈঠকে হ্যাপি ও শাহিদা নামের দুই গৃহবধূকে অমানবিকভাবে নির্যাতনের খবর গত ৭ জুলাই পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর গত ২৪ জুলাই হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত আদেশে সালিশে উপস্থিত ৭ জনকে তলব করে। এছাড়া ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে ৩১ জুলাই বদরগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়।
আদালতের আদেশে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংশ্লিষ্টরা হাইকোর্টে হাজির হন। শুনানি শেষে আদেশে বলা হয়, হাইকোর্ট ৭ অগাস্ট রংপুরের বদরগঞ্জে দুই গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনা শুনবে। ওইদিন দুই গৃহবধূকে সসম্মানে আদালতে নিয়ে আসতে বদরগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই সময়ের মধ্যেই বিষয়টির তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে এবং অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোবারক আলী সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আদালত থেকে বের হওয়ার পর আদেশ অনুযায়ী বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল রউফ মণ্ডল, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোজাহেদ আলী, ইউপি সদস্য ইলিয়াস আলী ও মাদরাসা শিক্ষক সেকান্দার আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।"
এছাড়া মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হকসহ ওই সালিশে উপস্থিত এনামুল হক ও এনামুল হোসেনকে আগেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রোববার তাদেরও আদালতে হাজির করা হয় বলে জানান তিনি।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলে, "এই সালিশ-ব্যবসা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। কেউ যদি সালিশ করে আমরা এর ব্যবস্থা করবো। পুলিশের দায়িত্ব এই সালিশ বন্ধ করা। কেউ বন্ধ করতে ব্যর্থ হলেও আমরা ব্যবস্থা নেব।"
সালিশ করাটাই ফৌজদারি অপরাধ উল্লেখ করে আদালন বলে, সালিশ করার জন্য ঘর থেকে বের করে উঠোনে আনলেই সেটা অপহরণ হিসাবে গণ্য হবে।
ওই সালিশের খবর পেয়েছিলেন কি না- আদালতের এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি নেতিবাচক উত্তর দিলে আদালত বলেন, "খবর না পেয়ে থাকলেও সেটা আপনারই ব্যর্থতা ও কর্তব্যে অবহেলা।"
"আপনি এমন ধারায় অভিযোগ এনেছেন- যেন আদালতে দাঁড়ালেই আসামি জামিন পেয়ে যায়," যোগ করে আদালত।
আদালতের সরকারি আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আলতাফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, হাইকোর্ট নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের ৭ ও ১০ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১২০, ১৪৭, ২০৩ ও ৩২৫ ধারা ওই মামলার এজাহারে উল্লেখ করতে বলেছে। এ সব ধারায় অপহরণ নির্যাতন, ষড়যন্ত্র ও অবৈধ সমাবেশের কথা বলা হয়েছে।
আদালতে বদরগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। আর সেকান্দারের পক্ষে ছিরেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। অন্য আসামীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যরিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।