মঈনুল হক চৌধুরী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ঢাকা, এপ্রিল ২৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- মৌলভীবাজারের এক গ্রামের ১০ জনের নাম ভোটার তালিকা বাদ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। পুলিশ জানিয়েছে, এরা ভারতীয় নাগরিক।
একইসঙ্গে তাদের তালিকাভুক্ত করায় জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরা হলেন- চাওথোই সিংহ, নানাও দেবী, রোমি সিংহ, ববিতা দেবী, মানান শর্মা, বেনু সিংহ, উলেন সিংহ, শৈলেজা, জাইকায়া সিংহ ও ধনী সিংহ।
পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার ইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ইসি সচিবালয়ের উপসচিব (নির্বাচন) মিহির সারওয়ার মোর্শেদ।
ওই ১০ জন ভারতীয় মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের ছোট ধামাই গ্রামের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেন।
বড় ধামাই ইউনিয়নের আলহাজ্ব আদর উদ্দিন গত বছরের ১২ অক্টোবর পুলিশ ও জেলা নির্বাচন অফিসে অভিযোগ করেন, তারা ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা'র সদস্য।
এ বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার তদন্তের পর মৌলভীবাজার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, "তদন্তে ভুয়া ভোটার হিসাবে ভারতীয় নাগরিকের নাম অন্তর্ভুক্তির সত্যতা পাওয়া যায়।"
ইসির তদন্তে বলা হয়েছে, তারা অনিবাসী অস্ত্রধারী গ্র"পের সদস্য।
মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, "পুলিশ প্রতিবেদন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, অভিযোগকারী ও সাক্ষীদের বক্তব্য বিষয়টির তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মতামতের ভিত্তিতে ওই ১০ জনকে তালিকা থেকে বাদ দিতে বলেছে কমিশন।"
তবে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্টদের হাতে থাকায় তা বাতিলের পাশাপাশি পরবর্তী করণীয়ও ভেবে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গত ২৭ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াছিন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে এক চিঠিতে ওই ভারতীয়দের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।
মৌলভীবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন গত ৮ নভেম্বরে এ বিষয়ে ইসির কাছে নির্দেশনা চান। এ কর্মকর্তা অভিযুক্ত ১০ জনের মধ্যে ৪ জনের নাম ভোটার তালিকা ও সিডিতে ভোটার নম্বরে গরমিল পান।
২৪ নভেম্বর জেলা নির্বাচন ও রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তাকে অভিযোগের বিষয়ে যাচাই করার নির্দেশ দেয় ইসি।
এরই ধারাবাহিকতায় তদন্ত শেষে ১৮ এপ্রিল ভোটার রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন ইসিকে জানান, অভিযুক্তরা এ এলাকার বাসিন্দা নন। ওই নামের কেউ এলাকায় থাকেন না।
'তাদের অন্তর্ভুক্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা'
ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির সময় নিবন্ধন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন বেলায়েত হোসেন।
ওই ১০ জনের নাম অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে বেলাতেন ইসিকে জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের জন্মসনদ থাকায়, রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে ভোটার হওয়ায় এবং ভোটার তালিকা তৈরির সময় অভিযুক্তরা এলাকায় ছিল বলেই তারা তালিকাভুক্ত হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রও পেয়েছে।
"তদন্তে সময় সংশ্লিষ্টদের অভিযুক্তদের বিষয়ে মুখ খুলতে ভীত সন্ত্রস্ত ভাব থেকে প্রমাণ হয়, অভিযুক্তরা অনিবাসী অস্ত্রধারী গ্র"পের সদস্য।"
পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন, সদস্য নীলবাবু সিংহ, সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার নিশ্চিত করেন ওই ১০ জন এ এলাকার নন।
এ কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত দুজনের শনাাক্তকারী ও যাচাইকারী হচ্ছেন ইউপি সদস্য নীলবাবু। পাঁচজনের শনাক্তকারী ও যাচাইকারী রনজিতা শর্মা, রাজকিশর সিংহ, রাজমোহন সিংহ, চন্দ্রহাস সিংহ ও শীতল তদন্তে অনুপস্থিত ছিলেন। বাকি তিনজনের যাচাইকারীর নাম অস্পষ্ট থাকায় পচিরয় জানা সম্ভব হয়নি।
ইসির উপ সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, "ভুয়াদের যারা ভোটার তালিকাভুক্ত হতে সহায়তা করেছে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবে ইসি। এক্ষেত্রে কারা জড়িত ছিল সে বিষয়টি যাচাই করতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।"
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএইচসি/পিডি/১৮২০ ঘ.