‘স্বজাতির স্বরূপ অন্বেষণে ব্রতী ছিলেন এনামুল হক’

ভাষা গবেষক, সাহিত্যিক মুহম্মদ এনামুল হক জীবনভর স্বদেশ-স্বমাজ ও স্বজাতির স্বরূপ অন্বেষণ করে বেড়িয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2017, 08:02 PM
Updated : 24 Sept 2017, 08:02 PM

‘মুহম্মদ এনামুল হকের সারস্বত সাধনা’ শীর্ষক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এনামুল হকের কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

রোববার বিকালে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ড. মুহম্মদ এনামুল হক স্মারক বক্তৃতানুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম। আলোচনায় অংশ নেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। 

একক বক্তৃতা প্রদানকালে অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা বলেন, “মুহম্মদ এনামুল হক একজন নিষ্ঠাবান গবেষক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাঙালির সামাজিক ইতিহাসের নানা দিক ছিল তার আগ্রহ, অনুসন্ধান, অধ্যয়ন ও গবেষণার বিষয়। এই স্বারস্বত চর্চার প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে তার স্বজাতি ও স্বদেশপ্রেম।”

বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান সম্পর্কেও মুহম্মদ এনামুল হক ‘গুরুত্বপূর্ণ’ গবেষণা করেছেন বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আবদুল কাইউম।

তিনি বলেন, “মুহম্মদ এনামুল হকের চিন্তার পরিধি ছিল ব্যাপক, গভীরতাও ছিল তার ভাবনায়। এদেশের সমাজ-সংস্কৃতিকে তিনি গভীরভাবে অনুধাবন করতে চেয়েছেন। তার উপলব্ধি প্রকাশ করেছেন অকপটে।”

শামসুজ্জামান খান বলেন, “ড. মুহাম্মদ এনামুল হক বাংলা একাডেমির প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। একাডেমির অভিধান চর্চা তার হাতে বিশেষ মাত্রা অর্জন করেছিল। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনুসন্ধিৎসু গবেষণায় তিনি অনন্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।”

ড. মুহাম্মদ এনামুল হককে গোটা বাংলা অঞ্চলের এক ‘অসাধারণ প্রজ্ঞাবান পণ্ডিত’ অভিহিত করে সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম বলেন, “ভারতীয় ভাষাতত্ত্বের নানা দিক থেকে শুরু করে বাংলার আঞ্চলিক ভাষা পর্যন্ত তার আগ্রহের পরিসর বিস্তৃত ছিল। তিনি শিক্ষাবিদ হিসেবেও ছিলেন অনন্য। দেশহিতব্রতী শিক্ষাবিদ, পণ্ডিত  মুহাম্মদ এনামুল হকের কৃতির প্রাসঙ্গিকতা কখনো ফুরোবার নয়।”

কর্মজীবনের শুরুতে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মুহম্মদ এনামুল হক। পরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য করা হয়, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সভাপতির পদও পান তিনি।

১৯৭৫ সালে তিনি  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন। ১৯৮১ সালে তিনি ঢাকা জাদুঘরে আমৃত্যু সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে যোগ দেন।

মুহম্মদ এনামুল হক মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস এবং বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণ বিষয়ে দুরূহ গবেষণা কর্মে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের লুপ্তপ্রায় পাণ্ডুলিপির সন্ধান দেন।

এনামুল হক তার বহুমুখী প্রতিভার জন্য নানা পুরস্কারে সম্মানিত হন। তিনি ১৯৬২ সালে ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ খেতাব, ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, ১৯৭৯ সালে একুশে পদক, ১৯৮০ সালে শেরে বাংলা সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮১ সালে মুক্তধারা ও আব্দুল হাই সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলা একাডেমি পরে তার নামে ‘মুহম্মদ এনামুল হক সাহিত্য পদক’ প্রচলন করে।