মুদ্রা পাচারের অভিযোগে মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পিছিয়েছে।
Published : 11 Sep 2017, 01:13 PM
গুলশান থানার এই মামলায় সোমবার নির্ধারিত দিনে তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় ঢাকা মহানগর হাকিম নূর নাহার ইয়াসমীন আগামী ১৮ অক্টোবর নতুন দিন রাখেন।
পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী কমিশনার মিরাশ উদ্দিন জানান, ঢাকা মহানগর হাকিম নুর নবী গত ১ অগাস্ট এই মামলার এজাহার গ্রহণ করে ১১ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের দিন ঠিক করেন।
শুল্ক ফাঁকি দিয়ে একটি গাড়ি ব্যবহারের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের দুই মাস পর সোমবার সকালে মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে ওই মামলা দায়ের করেন শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) মো. জাকির হোসেন।
শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগই এ মামলার তদন্ত করবে বলে সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন এ বিভাগের মহাপরিচালক মঈনুল খান।
‘কারনেট ডি প্যাসেজ’ সুবিধায় জনৈক ফারুক উজ-জামান চৌধুরীর নামে নিবন্ধিত ওই রেঞ্জ রোভার গাড়ি গত ২১ মার্চ মুসার ছেলের শ্বশুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। তারপর মুসাকে কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কার্যালয়ে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ভোলা বিআরটিএর কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজসে ভুয়া কাগজ দিয়ে ওই গাড়ি রেজিস্ট্রেশন এবং বেনামে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার কথা ওই সময়ই জানিয়েছিল শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
এ ঘটনায় মঈনুল খানের ভাষ্য, মুসা বিন শমসের ১৭ লাখ টাকা শুল্ক পরিশোধ দেখিয়ে ভুয়া বিল অব এন্ট্রি প্রদর্শন করে গাড়িটি বেনামে রেজিস্ট্রেশন করেন। কিন্ত শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই গাড়িতে ২ কোটি ১৭ লাখ টাকার শুল্ক প্রযোজ্য।
শুল্ক গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মুসা লিখিতভাবে জানান, সুইস ব্যাংকে তার ৯৬ হাজার কোটি টাকা গচ্ছিত আছে।
“কিন্তু তিনি এই টাকার কোনো ব্যাংক হিসাব বা বৈধ উৎস দেখাননি। কয়েকবার নোটিস দিলেও তিনি তা জমা দেননি,” মামলার পর বলেছিলেন শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক মঈনুল।
ওই তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মুসার বিরুদ্ধে মামলা করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সুপারিশও করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। পাশাপাশি ফাঁকি দেওয়া অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলার অনুমতি চাওয়া হয় রাজস্ব বিভাগের কাছে। সেই অনুমতি পাওয়ার পর সোমবার মুদ্রা পাচারের মামলাটি হয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই মুসা বিন শমসেরের সম্পদ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে।
জনশক্তি রপ্তানি দিয়ে মুসার ব্যবসার শুরু হলেও তার পরিচয় দিতে গিয়ে অস্ত্র ব্যবসার কথাই বেশি আসে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে। বিলাসি জীবন-যাপনের কারণে বিদেশি গণমাধ্যমে অনেক সময় তাকে বলা হয় ‘প্রিন্স অব বাংলাদেশ’।
১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী টনি ব্লেয়ারের নির্বাচনী প্রচারের জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনায় আসেন বাংলাদেশের এই ব্যবসায়ী।
একটি দৈনিকে সুইস ব্যাংকে মুসা বিন শমসেরের ৫১ হাজার কোটি টাকা থাকার খবর ছাপা হয়েছিল। তবে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গত বছর মুসা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশে বসে কেউ এত অর্থ উপার্জন করতে পারবে না।
মুসার বিরুদ্ধে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করার অভিযোগও রয়েছে, যার অনুসন্ধান করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
সম্প্রতি তার ‘যুদ্ধাপরাধের তথ্য’ সম্বলিত নথি তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছেন সাংবাদিক সাগর লোহানী ও প্রবীর সিকদার।
তবে মুসার দাবি, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন তিনি।