বন্যায় ২১টি জেলার ৭ হাজার ১৩০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ঈদ যাতায়াতে যা দুর্ভাবনা তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Published : 24 Aug 2017, 06:25 PM
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্রের (এনডিআরসিসি) উপ-সচিব জি এম আব্দুল কাদের বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের এই তথ্য জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জামালপুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জেলার ১ হাজার ১০৪ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জামালপুরেই এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও জামালপুরেই বেশি।
কাদের জানান, অন্যান্য জেলার মধ্য টাঙ্গাইলের ৯৯৭ কিলোমিটার, কুমিল্লার ৮৮০ কিলোমিটার, পঞ্চগড়ের ৮৫৮ কিলোমিটার, নীলফামারীতে ৫৩৬ কিলোমিটার রাস্তার ক্ষতি হয়েছে।
এর আগে গত রোববার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে এ পর্যন্ত ২৩টি পয়েন্টে রাস্তা পানির নিচে রয়েছে এবং ১৮টি পয়েন্টে রাস্তা ‘ওয়াশআউট’ হয়ে গেছে।
ঈদের আগে এসব রাস্তা ঠিক করা ‘খুবই চ্যালেঞ্জিং’ হবে বলেও জানিয়েছিলেন মন্ত্রী।
বন্যায় এ পর্যন্ত ১৩৭ জন মানুষ মারা গেছে এবং ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার ৭১৮ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কাদের।
ক্ষয়ক্ষতি
>> দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩২ জেলার ১৯৯টি উপজেলা ও ৫১টি পৌরসভা বন্যা কবলিত হয়েছে
>> দিনাজপুরে ৩০ জন, নীলফামারীতে ৬ জন, লালমনিরহাটে ৬ জন, কুড়িগ্রামে ২৩ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ জন, গাইবান্ধায় ১৩ জন, বগুড়ায় ৪ জন, সিরাজগঞ্জে ৬ জন, জামালপুরে ১৪ জন, সুনামগঞ্জে ২ জন, নেত্রকোণায় ৪ জন, যশোরে ৩ জন, টাঙ্গাইলে ২ জন, শেরপুরে ৪ জন, মৌলভীবাজারে ২ জন, নওগাঁয় ৬ জন, কুমিল্লায় ২ জন, রংপুরে ৬ জন, মানিকগঞ্জে ১ জন ও জয়পুরহাটে ২ জন মিলিয়ে মোট ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে গত দুই সপ্তাহে।
>> বানের জলে ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৬২ হেক্টর ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
>> ৪২৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
>> দুর্গত জেলাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬১ হাজার ১০৮টি টিউবওয়েল
>> ক্ষতি হয়েছে ৫০টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের
>> ৩৭৮ কি.মি. বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত ও ৪৪৬টি ব্রিজ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
দেশব্যাপী বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন।
তিনি বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকবে।
“পদ্মা নদীর পানি কমতে থাকায় দেশের দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুরের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি ঘটবে।”
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকার চতুর্দিকের বালু, তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, টঙ্গিখাল এখনও বিপদসীমার যথাক্রমে ৭৮ সেন্টি মিটার, ৯ সেন্টি মিটার, ১২ সেন্টিমিটার এবং ৮ সেন্টি মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী বিপদসীমার ১৮ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে বইলেও গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ৩ সেন্টি মিটার কমেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, রাঙামাটি, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নাটোর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ঢাকা, শেরপুর জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ এই দফায় বন্যার কবলে পড়েছে।