ট্রেন টিকেটের ২৫ ভাগ অনলাইন এবং মোবাইলের মাধ্যমে কেনার সুযোগ থাকলেও ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরুর পর ১৮ অগাস্ট থেকে এই টিকেট কিনতে পারছেন না কেউ।
Published : 22 Aug 2017, 04:15 PM
অনলাইন ও মোবাইলে টিকেট কিনতে গিয়ে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন টিকেট কিনতে আগ্রহীরা। এই ২৫ ভাগ টিকেট কালোবাজারে চলে যাচ্ছে বলে সন্দেহ করছেন তারা।
তবে এই টিকেটগুলো বাইরে বিক্রির সুযোগ নেই দাবি করে রেলের মহাপরিচালক বলছেন, ঈদের এই সময়ে টিকেট কিনতে চাপ বাড়ায় তাদের সার্ভার হ্যাং করতে পারে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, গত ঈদুল ফিতরেও অনলাইন ও মোবাইলে টিকেট কিনতে পারেননি তারা। এবার কোরবানির ঈদের টিকেট গত ১৮ অগাস্ট ছাড়ার পর থেকে একই সমস্যা।
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে রেলওয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট কেনা যায়। একই সময়ে মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও আগাম টিকেট কেনা যায়।
কমলাপুর থেকে বিভিন্ন রুটের ৩১টি আন্তঃনগর ট্রেনের বিভিন্ন গন্তব্যের ২২ হাজার ৪৯৬টি এবং তিনটি বিশেষ ট্রেনের ২ হাজার ৬০৬টি টিকেট দেওয়া হয়েছে। এসব ১৫ ভাগ মোবাইলে আর বাকি ১০ ভাগ অনলাইনে কেনার সুযোগ রয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রেলওয়ের ই-সেবা সাইটে গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কেনার চেষ্টা করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মো. এনামুল হক। টাকা কেটে রাখলেও কাঙ্ক্ষিত টিকেট পাননি তিনি।
এনামুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একাউন্ট ডেবিট করার এসএমএস ও মেইল কনফার্মেশন সাথে সাথেই আসে। কিন্তু টিকেট কনফার্মেশন লিঙ্ক ওপেন হওয়ার আগেই সাইটটি ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। টিকেটের মূল্য বাবদ ৭৪৫ টাকা ই-সেবাডটসিএনএসবিডি এর অনুকূলে টার্মিনেট দেখাচ্ছে, কিন্তু টিকেট তো পেলাম না।”
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাহিদুজ্জামান তার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “ওদের সাইটে ঢুকলে বলে পুরোনো একাউন্ট কাজ করবে না। নতুন একাউন্ট করতে হবে। নতুন একাউন্ট দিয়ে ওদের সাইটে একবার লগইন করে বন্ধ করার পর আবার নতুন করে লগইন করা যায় না। এছাড়া কোন স্টেশনে কয়টা আসন বরাদ্দ আছে, তা দেখায় না। দেখায় সিট ‘নট অ্যাভেইলেবল’।”
গত তিন-চার দিন ধরে সিএনএসের সাইটে ঢোকা যাচ্ছে না বলে জানান আলতাফ হোসেন নামে আরেক টিকেট প্রত্যাশী।
“আমিও নতুন আইডি খুলেছি, ভেরিফিকেশনও হয়েছে। কিন্তু এরপর আর ওদের সাইটেও ঢুকতে পারিনি, টিকেট কিনতে পারিনি।”
সোমবার কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজারের কক্ষে অভিযোগ নিয়ে আসেন পুলিশ পরিদর্শক আবুল বাশার। তিনি অনলাইন এবং মোবাইলে টিকেট কেনার চেষ্টা করেও সফল হননি।
বাশার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জয়পুরহাট যেতে নীলসাগর, দ্রুতযান ও একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কেনার চেষ্টা করেছেন তিনি।
“১৮ অগাস্ট থেকে চেষ্টা করছি। আজকেও চেষ্টা করলাম, টিকিট কাটতে পারিনি। সার্ভারে ঢুকলেই বলছে ম্যালফাংশান, সিট ব্লকড। এসএমএসের মাধ্যমে কিনতে চাইলেও একসেস করতে পারছি না।”
মোবাইল এসএমএস এবং ইন্টারনেটে টিকেট কিনতে না পারায় রেলওয়ের যাত্রীদের ফেইসবুক গ্রুপের পেইজ বাংলাদেশ রেলওয়ে ফ্যানস ফোরামে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকে।
মুনতাসির রাহি নামে একজন লিখেছেন, “অনলাইনের ২৫% টিকেট কি সিএনএস চুরি করছে নাকি রেলের লোক? ঠিক ৮টায়ও সব টিকেট সোল্ড আউট। সিএনএস এর কোনো জবাবদিহি নাই? এভাবে রেল লাভের মুখ আগামী ৫০ বছরেও দেখবে না।”
শামীম লিমন নামে আরেকজন লিখেছেন, “অনলাইনে টিকেট কি আজও দিছে? আজ চেষ্টা করলাম ৩০ তারিখের টিকেটের জন্য। কিন্তু চরম হতাশ। রেলওয়ে বলে দিক টিকিট দিবে না, তাহলে আর এই ভোগান্তি হইত না।”
নাজমুল হাসান নিপুন নামে একজন লিখেছেন, “অনলাইন সিস্টেমের কী হয়েছে? অনলাইন সিস্টেম এখন কার দখলে? আমরা সাধারণ মানুষদের কি অনলাইনে টিকেট কাটার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে?”
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা বজলুর রশিদ অভিযোগ করেন, “৩১ তারিখের রংপুর থেকে ঢাকা যাবার একটি টিকিট করেছি অনলাইনে এবং টাকা কেটে নিছে বাট টিকিট দেয় নাই, কোনো পিন দেয় নাই, মেইল আসে নাই, এখন কী করব? ”
‘সব ঠিক আছে’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সবাই একসঙ্গে সাইটে ‘ইন’ করতে চাওয়ায় সমস্যা হতে পারে।
“টিকেট বিক্রির কার্যক্রম যখন শুরু হচ্ছে তখন সবাই একসঙ্গে ইন করতে চায়। আমরা নিজেরা সিস্টেমে ঢুকে চেক করে দেখেছি সব ঠিক আছে। সিস্টেম ইজ ওকে। কিন্তু আমার মনে অনেক লোক একসময়ে সিস্টেমে ঢুকতে চায় বলে এটা হ্যাং করতে পারে।”
“আমাদের সার্ভারের ক্যাপাসিটি আমরা দেখছি প্রব্লেম হচ্ছে কি না? অনলাইনের সিস্টেম ঠিক আছে। সেটাতে এদিক সেদিক করার কোনো সুযোগ নাই।”
কোটার টিকেট বাইরে বিক্রি করার সুযোগ নেই বলে জানান রেলওয়ের মহাপরিচালক।
“অনলাইনে কোনো কারণে টিকেট বিক্রি না হলে সেটা অটোমেটিক আমাদের কাউন্টারে চলে আসে।”
ট্রেনের কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত আসন সংরক্ষণ ও টিকেটিং (সিএসআরটি) ব্যবস্থা পরিচালনা করছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম বা সিএনএস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ই-টিকিট বিক্রি পরিচালো, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কাজও করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি মোবাইল ও ইন্টারনেটে টিকিট বিক্রি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের দায়িত্বও পালন করছে সিএনএস।
এ বিষয়ে কথা বলতে কমলাপুরে সিএনএসের কার্যালয়ে গেলে সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা বলেন, ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। কর্মকর্তারাও কেউ নেই।
সিএনএসের ওয়েবসাইটে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।