যুদ্ধাপরাধের মামলায় দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিল শুনানির জন্য ১০ অক্টোবর দিন রেখেছে সর্বোচ্চ আদালত।
Published : 13 Aug 2017, 10:14 AM
মামলা দুটি রোববার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চে এলে আদালত এই দিন ঠিক করে দেয়।
এই বেঞ্চের অপর দুই বিচারক হলেন বিচারপতি মো. সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে আজহারের পক্ষে জয়নুল আবেদীন এবং কায়সারের এস এম শাজাহান অ্যাডভোকেড অন রেকর্ড হিসেবে ছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল দুই মামলায় আলাদা শুনানির আবেদন করলে প্রধান বিচাপরতি বলেন, “আপনারা অনেক সময় নিয়ে নিয়েছেন। লিখিত আর্গুমেন্ট জমা দেবেন, শুনানি হবে।”
আদেশে বলা হয়, মামলার পক্ষগুলোকে ২৪ অগাস্টের মধ্যে আপিলের সার সংক্ষেপ জমা দিতে হবে। ১০ অক্টোবর থেকে বিরতিহীনভাবে শুনানি চলবে।
আপিল বিভাগে গত বছরের ৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর আপিলের রায় হয়েছিল। ১৬ মাস পর আরও দুটি আপিলের শুনানির তারিখ পড়ল একই সঙ্গে।
এর মধ্যে চলতি বছরের ১৫ মে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রিভিউ নিষ্পত্তি করেছে আপিল বিভাগ।
যুদ্ধাপরাধ মামলায় এখন পর্যন্ত সাতটি আপিলের রায় ঘোষণা হয়েছে আপিল বিভাগে।
প্রায় তিন বছর আগে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরধ ট্রাইব্যুনাল-১ একাত্তরে রংপুর জেলা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
প্রসিকিউশনের আনা নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে পাঁচটি এবং পরিকল্পনা-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি (উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে।
এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের রায় আসে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা চালিয়ে অন্তত ১৪০০ লোককে হত্যা এবং ১৪ জনকে খুনের অপরাধে।
এছাড়া ওই অঞ্চলের বহু নারীকে রংপুর টাউন হলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্রে ধর্ষণের জন্য তুলে দেওয়ার অভিযোগে একাত্তরের এই বদর কমান্ডারকে ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের আরেকটি ঘটনায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি খালাস চেয়ে আপিল করেন এই জামায়াত নেতা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে সৈয়দ কায়সারকে ২০১৫ সলের ২৩ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
১৯৭১ সালে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে ওই দুই জেলায় যুদ্ধাপরাধে নেতৃত্ব দেন এই মুসলিম লীগ নেতা। জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি হয়ে যান বিএনপির লোক, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময় জাতীয় পার্টির।
সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।
তাকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয় ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে, যার মধ্যে দুই নারীকে ধর্ষণের ঘটনাও রয়েছে। এই দুই বীরাঙ্গনার মধ্যে একজন এবং তার গর্ভে জন্ম নেওয়া এক যুদ্ধশিশু এ মামলায় সাক্ষ্য দেন।
২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি আপিল করেন সৈয়দ কায়সার।