এএসপি মিজানুর খুন হন ‘ছিনতাইকারীর হাতে’

সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মিজানুর রহমান তালুকদারকে খুনে জড়িত অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল ছিনতাইয়ের ঘটনা।   

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও আদালতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2017, 06:25 AM
Updated : 23 July 2017, 03:01 PM

গত ২১ জুন ছিনতাইয়ের সময় পুলিশ পরিচয় জানার পর ছিনতাইকারীরা মিজানকে হত্যা করে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. ইউসূফ আলী জানান, গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল শনিবার রাতে টঙ্গী এলাকা থেকে শাহ আলম নামের ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।

“সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।”

পঞ্চাশোর্ধ্ব মিজান হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর অঞ্চলের সাভার সার্কেলের দায়িত্বে ছিলেন।  

গত ২১ জুন সকালে রাজধানীর রূপনগর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বিরুলিয়া ব্রিজের কাছে রাস্তার পাশে গলায় কাপড় পেঁচানো অবস্থায় মিজানের লাশ পাওয়া যায়।

ওই ঘটনায় তার ছোট ভাই মাসুম তালুকদার রূপনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কারও নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাত পরিচয় একাধিক ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সেদিন ভোরে সেহেরি খাওয়ার পর সাধারণ পোশাকে উত্তরার বাসা থেকে কর্মস্থল সাভারের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন এএসপি মিজানুর। যে জায়গায় তার লাশ পাওয়া গেছে, বাসা থেকে তা গাড়িতে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের পথ।

মিজানুর রহমান

ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা মিজানকে গাড়িতে তুলে নিয়েছিল বলে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল জানান।

গ্রেপ্তার শাহ আলমের কাছে পাওয়া তথ্যে ভিত্তিতে তিনি বলেন, তারা ছিল চারজন। একটি প্রাইভেটকারের সামনে চালকের আসনের বসেছিলেন জাকির, চালকের বাম পাশের আসনে ছিলেন শাহ আলম ওরফে বুড্ডা, পেছনের আসনে বসেছিলেন মিণ্টু ও কামাল ওরফে ফারুক।

“এএসপি মিজানুরকে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তারা গাড়িতে উঠিয়েছিল। পরে ফারুক বুঝতে পারে যে গাড়িতে যাকে উঠিয়ে তিনি (মিজানুর) সরকারি লোক। তাই ফারুক পালাতে চেয়েছিল। কিন্তু মিণ্টু তখন ফারুককে বলে, ‘তুই কি পালায়ে বাঁচতে পারবি?’ চালক জাকির তখন খুব জোরে গাড়িতে গান বাজিয়ে, লাইট বন্ধ করে দ্রুত বেগে চালিয়ে জসিম উদ্দীন সড়ক হয়ে হাউজ বিল্ডিং হয়ে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের দিকে চলে যায়।”

মিজানকে প্রাইভেটকারটির পেছনে ফারুক ও মিণ্টুর মাঝে বসানো হয়েছিল বলে শাহ আলম পুলিশকে জানিয়েছেন।

মনিরুল বলেন, “গাড়িতে থাকা ঝুট কাপড়ের টুকরা দিয়ে মিণ্টু ও ফারুকের মধ্যে একজন মিজানুরের গলায় পেঁচিয়ে ধরে। শ্বাসরোধে হত্যার পর বিরুলিয়া ব্রিজের আগেই রাস্তার পাশে ঘন গাছপালায় পাশে মৃতদেহ রেখে পালিয়ে যায় তারা।”

মিজানের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, শরীরে আঘাতের অনেক চিহ্ন দেখেছেন তারা। চামড়ার নিচে জমাট রক্ত আর গলায় দাগ ছিল।

এই চক্রটি ওই এলাকায় নিয়মিত ছিনতাই করে আসছিল জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, “মিজানুরের কাছে তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু পরিচয় জানতে পেরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই চক্রটি পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয় জানলে সেই ব্যক্তিকে আর বাঁচিয়ে রাখে না।”

২০১০ সালের এ রকম দুটি ঘটনার কথাও বলেন তিনি।

গ্রেপ্তার শাহ আলমকে বিকালে ঢাকার আদালতে নিয়ে যান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পশ্চিম) পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম।

তিনি মহানগর হাকিম সাজ্জাদুর রহমানের খাসকামরায় ওই ঘটনায় নিজের দায় ন্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ওই আদালতে পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাহ আলম গ্রেপ্তারের পর পুলিশের  কাছে যা বলেছে সে রকমই বিচারকের কাছে বলেছে।”