শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় এই উৎসব থেকে অপরিকল্পিত উন্নয়ন পরিকল্পনা আর মানবসৃষ্ট দুর্যোগের দায় মেনে নিয়ে প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয় নাগরিকদের প্রতি।
শ্রাবণের ষষ্ঠ দিনের সকালে বিজন চন্দ্র মিস্ত্রীর পরিবেশনায় রাগ ‘কাদেরিয়া’য় শুরু হয় বর্ষা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর রবীন্দ্রনাথের গান ‘মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো’র সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দনের শিশুশিল্পীরা। আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল পরিবেশন করেন শামসুর রাহমানের ‘হঠাৎ বৃষ্টি এল’ কবিতাটি।
সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর দলীয় পরিবেশনা ‘এসো শ্যামল সুন্দর’-এর পর রবীন্দ্র সংগীত ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য নিয়ে মঞ্চে আসেন নৃত্যজনের শিল্পীরা।
বহ্নিশিখার দল গেয়ে শোনায় নজরুল সংগীত ‘মেঘের ডম্বরু বাজে’। তারপর ‘পাতা ঝরা বৃষ্টি বলো কেন এনেছো’ গানটির সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যমঞ্চ। নৃত্যাক্ষের দলীয় পরিবেশনা ছিল নজরুলের ‘রিমঝিম রিমঝিম ঝিম ঘন দেয়া বরষে’ গানের সঙ্গে।
দলীয় সংগীত পর্বে ছিল পঞ্চভাস্কর আর সমস্বরের পরিবেশনা। আবৃত্তি পর্বে জয় গোস্বামীর ‘মেঘবালিকার জন্য রূপকথা’ পরিবেশন করেন নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী।
একক সংগীত পর্বে আবু বকর সিদ্দিক শোনান উকিল মুন্সীর গান ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানিরে’, মামুন জাহিদ খান শোনান আধুনিক গান ‘বরষা তুমি অমন ভাবে ঝরোনা, সঞ্জয় কবিরাজ শোনান নজরুল সংগীত ‘পরদেশী মেঘ’, আঞ্জুমান ফেরদৌস কাকলী শোনান ডি এল রায়ের ‘আমরা মলয় বাতাসে’।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলাকালেই সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় ধসে শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুর খবর আসে। বর্ষা কথন পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের কণ্ঠেও ছিল সেই শোকের প্রকাশ।
প্রকৃতি সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আশা করব, মানুষ প্রকৃতিকে ভালোবেসে প্রকৃতি সুরক্ষা, ঋতুবৈচিত্র্য রক্ষায় যা কিছু প্রয়োজনীয়, করণীয় সবকিছু করবে। প্রকৃতির উপর অত্যাচার, নিপীড়ন বন্ধে তারা আরও সচেতন হবেন।
ঋতু্বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশের নাগরিক মানুষও বর্ষা উৎসবে যোগ দিয়ে ‘বর্ষার মতো সজীব আর উদার’ হয়ে উঠবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
“বর্ষা প্রতি বছর পলিমাটি নিয়ে এসে উর্বর করে মাটি। ধুয়ে দেয় সব ময়লা। বর্ষার মতো সজীব হয়ে ওঠে দেশবাসী মনের সব সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলবেন, সঙ্কট নিরসনে এগিয়ে এসে আরও উদার হবেন, এমনই আশা করি।”
নগরকেন্দ্রিক জীবনযাত্রায় শিশু-কিশোরদের প্রকৃতি-সংযোগ ঘটাতে বর্ষা উৎসবের মতো আয়োজনের গুরুত্বও নিজের বক্তৃতায় তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
“খালবিল ভরাট করছি, নদীগুলো ঠিকমতো ড্রেজিং হচ্ছে না, তলদেশ ভরাট হচ্ছে- বর্ষাকে আসলে যেভাবে গ্রহণ করা উচিৎ, আমরা তা করছি না। বর্ষাকে, প্রকৃতিকে মানুষের কাজে ব্যবহার করতে হবে।”
অনুষ্ঠানের সভাপতি সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক নিগার চৌধুরী বলেন, “বর্ষা উৎসবের মত অসাম্প্রদায়িক উৎসবে যোগ দিয়ে উৎসবপ্রিয় বাঙালিরা সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হবেন, তারাই প্রতিহত করবেন সাম্প্রদায়িকতা।”
অনুষ্ঠান শেষে শিশু-কিশোরদের মধ্যে বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছের চারা বিতরণ করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।