জালিয়াতির মাধ্যমে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপ-সচিব মো. রুহুল আমিনসহ দুই আসামির জামিন বাতিল করেছে আপিল বিভাগ।
Published : 10 Jul 2017, 02:02 PM
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।
যিনি জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির সময় উপসচিব রুহুল আমিন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আর জামিন বাতিল হওয়া আরেক আসামি বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জাফর আলম ওই সময় জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তাদের জামিন বাতিলের শুনানিতে আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম।
পরে খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের জানান, মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণে ‘চিংড়ি খাতের ক্ষতিপূরণ’র নামে ভুয়া লোকজনের নামে প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
মামলার অন্যতম দুই আসামি কক্সবাজারের সাবেক ডিসি রুহুল আমিন ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জাফর আলমকে জামিন দিয়েছিল হাই কোর্ট। এর বিরুদ্ধে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষাপটে আপিল বিভাগ সোমবার তাদের জামিন বাতিল করে।
মামলায় সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলমকে গত ৯ মে ঢাকার সেগুনবাগিচা থেকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় দুদক। এরপর ২২ মে সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকেও কারাগারে পাঠায় আদালত।
মে মাসেই হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে মুক্ত হন এই দুই আসামি।
এর বিরুদ্ধে দুদকের আপিলে জামিন বাতিল হওয়ার পর আসামিদেরকে বিচারিক আদালতে দ্রুত আত্মসমপর্ণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, কক্সবাজারের মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপ-সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করা রুহুল আমিন ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন।
ওই সময় মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মহেশখালী উপজেলায় ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ২৩৭ কোটি টাকা।
এ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হলে ২৫টি অস্তিত্বহীন চিংড়ি ঘের দেখিয়ে অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের নামে স্বনামে-বেনামে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ২৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় আসামিরা।
মামলার ২৮ আসামির মধ্যে জেলা প্রশাসকসহ প্রথম নয়জন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। অপর আসামিদের সহায়তা করেছেন তারা।
আসামি তালিকার ১০ থেকে ২৮ নম্বর পর্যন্ত আসামিরা জমি বাবদ ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, যাদের মধ্যে কারও কারও জমি একেবারেই নেই; আবার কারও কারও আছে ঘোষণার চেয়ে কম জমি।
এভাবে পরস্পর যোগসাজসে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আসামিরা ২৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে কক্সবাজারের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আরেফিন আক্তার নূর, মহেশখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. ইলিয়াস, জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখার প্রধান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলামসহ আরও ২১ জন রয়েছেন।