ফরহাদ মজহার সকালে ‘অপহৃত’ হওয়ার পর বিকাল পর্যন্ত পাঁচ বার স্ত্রী ফরিদা আখতারকে ফোন করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Published : 03 Jul 2017, 10:05 PM
ডানপন্থি অধিকারকর্মী হিসেবে পরিচিত এই কবি ও প্রাবন্ধিক নিজের মোবাইল থেকে ফোন করে তার মুক্তিপণের বিষয়ে কথা বলেছেন বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সোমবার ভোরে রাজধানীর শ্যামলী রিং রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয় বলে তার পরিবারের সদস্যরা দাবি করছেন।
সকালে তারা ঘটনাটি জানালে পুলিশ অনুসন্ধানে নামে। মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে খুলনায় অবস্থান শনাক্ত করে সেখানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এরপর মধ্যরাতে তাকে যশোরে একটি বাস থেকে উদ্ধারের কথা জানায় র্যাব।
দুপুরে রিং রোডের হক গার্ডেনের চার তলায় ফরহাদ মজহারের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তার স্বজন-বন্ধুদের অনেকেই সেখানে ভিড় জমিয়েছেন। থানা পুলিশ ছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের সেখানে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।
পরিবারের সদস্য, বন্ধুরা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
পরিবারের এক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকাল পর্যন্ত ফরহাদ মজহারের ফোন থেকে ফরিদা আখতারের কাছে পাঁচবার ফোন এসেছিল।”
সর্বশেষ ফোনালাপে ১৫-২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা টাকার বিষয়ে চিন্তা করছি না। সুস্থভাবে তার ফিরে আসাটাই মূল লক্ষ্য।”
গৌতম দাশ নামে তার এক বন্ধু জানান, ফরহাদ মজহার ভোরে বের হওয়ার ২৪ মিনিট পরেই ফোন করে বলেন যে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে।
এরপর অপহরণকারীরা ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাইছে বলে আবার তিনি ফোন দেন বলে তার ওই স্বজন জানান।
পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সর্বশেষ রাত ৮টার দিকে ফরিদা আখতারের কাছে ফোন এসেছিল।
“৩৫ লাখ থেকে নেমে ২০ লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে ফোন করে জানায়। টাকা কোথায় দেওয়া হবে, কীভাবে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে ফরহাদ মজহারের পরিবারের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু চূড়ান্ত কোনো কথা হয়নি।”
অনুসন্ধানে যুক্ত থাকা পুলিশ কর্মকর্তা ডিএমপির উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ফরহাদ মজহার যে আইফোনটি সচরাচর ব্যবহার করেন ভোরে বের হওয়ার সময় তা সঙ্গে নেননি।
“তিনি গ্রামীণ নাম্বারের যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন এবং যে নম্বরটি সবার কাছে আছে সেটি বের হননি। এটি আইফোন। যে নাম্বারটি রবি নম্বারের এবং সাধারণ একটি সেটের, সেটা নিয়ে তিনি বের হয়েছেন। এই নম্বারটি সবার কাছে নেই।”
বিপ্লব বলেন, “এ নম্বার থেকে ফোন করার পর বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। যখন ফোন করার প্রয়োজন হয়, তখন আবার ফোনটি খুলছে।”
আদাবর থানা থেকে তিনশ গজ দূরে ফরহাদ মজহারের বাসা। ওই বাড়ির দারোয়ান মো. আলি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি ভোরে বাসা থেকে বের হয়ে হেঁটে ছোট ফটক দিয়ে বেরিয়ে সড়কে উঠতে দেখেছেন ফরহাদ মজহারকে।
তাকে কেউ উঠিয়ে নিয়ে গেছে, এমন কোনো দৃশ্য তার চোখে পড়েনি বলে জানান তিনি।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, শ্যামলী রিং রোড হক গ্যারেজের মোড় থেকে শ্যামলীর দিকে যেতে একটি হাসপাতাল রয়েছে। এই হাসপাতালের সামনে ওই সময় একটি মাইক্রোবাস ছিল। পরে সেটি আর দেখা যায়নি। সেই মাইক্রোবাসের সূত্র ধরে তাদের কাজ চলছে।
ওই হাসপাতালের সামনে পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকিও রয়েছে।
ফরহাদ মজহারের বাসার ভেতরে একটি ছোট কক্ষে আদাবর থানার ওসিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে দরজা লাগিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। সেখানে পরিবারের নির্দিষ্ট কয়েকজনকে ঢুকতে এবং বের হতেও দেখা যায়। তবে অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফরহাদ মজহারের ব্যক্তিগত ল্যাপটপটি তারা পরীক্ষা করেছেন।
সকাল থেকে সংবাদকর্মীরা ভিড় জমালেও বাসায় ঢুকতে পারেননি তারা। পরিবারের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে পরে গৌতম দাশ বাসার নিচে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক রাজনীতিক নূরুল ইসলাম ভূইয়া ছোটন।