যাত্রাবাড়ী থেকে কাচপুর সেতু পেরিয়ে যাওয়ার পরপরই বাম দিকে সিলেট মহাসড়ক, আর সোজা চলে যায় চট্টগ্রাম মহাসড়ক।
নাজুক কাচপুর সেতুতে নিত্য সময় যানজট লেগে থাকায় সিলেটগামী অনেক বাস ডেমরা সেতু হয়েই রাজধানী ছাড়ে। তবে কাচপুর সেতু হয়েও যায় অনেক বাস।
ভুলতায় ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজের পাশাপাশি সড়ক জুড়ে যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখা, উল্টোপথে চলার কারণে যানজট প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া ভুলতায় ঢাকা বাইপাস সড়কের যানবাহনকে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে সিগন্যাল দেওয়ায়ও সিলেটগামী যানবাহনকে আটকে যেতে হয়।
ঈদের আগে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
ভুলতার নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের দুপাশে মহাসড়ক চার লেইনের। তবে দুপাশেই সড়কের এক লেইনে যানবাহন চলতে পারে। এক লেইনজুড়ে ভুলতা থেকে কলাবাগান রুটের মেঘলা, গুলিস্তান রুটের আশিয়ান, গ্লোরি পরিবহনের বাস, কাঁচপুর রুটের লেগুনাগুলো দাঁড় করানো থাকে।
বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ভুলতা বাসস্ট্যান্ড মসজিদের কাছে সড়কের ফুটপাতজুড়ে কাঁচাবাজার। ভুলতা-মুড়াপাড়া সড়কের মোড়ে অটোরিকশা স্ট্যান্ডের অটোরিকশা চলে আসছে মহাসড়কে। সেখানে অটোরিকশা ঘোরানোর ফলে যানচলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গোলাকান্দাইল থেকে ভুলতা পর্যন্ত সড়কে উল্টোদিকে রিকশা, ভ্যান, নসিমন চলছে। গোলাকান্দাইল মোড়ে সড়কে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো হচ্ছে।
আবার ঢাকামুখী সড়কের এক লেইন জুড়ে লোকাল বাস-মিনিবাস যাত্রী উঠাচ্ছে নামাচ্ছে। এখানেই কাচপুরগামী হিউম্যান হলারের স্ট্যান্ড।
ভুলতার তাঁতবাজার মার্কেট, আবদুল হক সুপার মার্কেটের সামনের খালি জায়গা এবং ফুটপাতজুড়ে অস্থায়ী কাঁচাবাজার। রিকশাভ্যানে করে সবজি আনা-নেওয়া করায় সড়কের একটা অংশ সবসময় দখল করে রাখা হচ্ছে। এসব কারণেই যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
মঙ্গলবার দিনভর যানজট ছিল ওই সড়কের ভুলতা থেকে রূপসী পর্যন্ত। যানজট এড়িয়ে আগে যাওয়ার জন্য ভুলতা ঢাকা রুটের বিভিন্ন মেঘলা, আশিয়ান, গ্লোরিসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস, লেগুনা, মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়িগুলোতে উল্টোপথে যাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়।
এসব যানবাহন যানজট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী সোহাগ পরিবহনের চালক শাহীন আলম।
“রূপসী থাইকা জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে আসছি। লোকাল গাড়ি আর লেগুনাগুলা উল্টা দিকে আইসা জ্যাম আরও বাড়াইছে। এগুলি ঠেকাইতে না পারলে যানজট ঠেকান যাইব না।”
যানজটের কারণে ভুলতা পার হতেই ৩-৪ ঘণ্টা লেগে যায় বলে জানান ঢাকা সিলেট রুটের হানিফ পরিবহনের চালক সুমন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অনেক সময় যানজট এড়াতে মদনপুর হয়ে ঢাকা বাইপাস সড়ক দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি, কিন্তু সেই সড়কেও যানজট থাকে।
“একবার জ্যামে পড়লে তিন ঘণ্টা, চাইর ঘণ্টাও পইড়া থাকতে হয়। প্রশাসন যদি একটু শক্ত হয় তাইলে ঈদের আগে জ্যাম লাগবে না। আর যদি এখনকার মতন চলে তাইলে আমাগো কপালে খারাপি আছে।”
ঢাকা বাইপাস সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলোর কারণেই যানজট বেশি হয় বলে স্থানীয়রা জানান। বড় বড় ট্রাক, কভার্ড ভ্যান, ট্রেইলার ধীরে ধীরে চলে। ওই সড়কে সিগন্যাল দিলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দুপাশের যানবাহন আটকে পড়ে।
যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে- জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের নারায়ণঞ্জ অঞ্চলের এএসপি মো. আক্তারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দেখছি চট্টগ্রাম মহাসড়ক। সড়কের ওই অংশ নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ দেখছে।”
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা দেখা হাইওয়ে পুলিশের কাজ। আমরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সাপোর্ট দিই।”
হাইওয়ে পুলিশ না পারলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
“মানুষকে তো রাস্তায় বসাইয়া রাখব না, উনারা (হাইওয়ে পুলিশ) না পারলে আমাদের যা যা সাপোর্ট লাগে আমরা করব, যাতে জনগণ স্মুদলি চলে যেতে পারে।”
বিকল্প সড়কের অবস্থাও খারাপ
রাজধানীর উত্তরের অংশ, সাভার, গাজীপুর ও উত্তরবঙ্গের যানবাহন সিলেটসহ দেশের পূর্বাঞ্চলে যেতে টঙ্গী-ঘোড়াশাল-পাঁচদোনা সড়ক ব্যবহার করে। টঙ্গী থেকে নরসিংদীর পাঁচদোনা পর্যন্ত সড়কটি ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। পাঁচদোনায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মিলেছে সড়কটি।
ঢাকা থেকে বের হতে অনেকে এ সড়কটি বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে। তবে অপ্রশস্ত এ সড়কের বিভিন্ন অংশ ভাঙাচোরা।
ঘুরে দেখা গেছে, টঙ্গী পার হয়ে নিমতলী রেলক্রসিংয়ের পাশে ময়লার ভাগাড়। সেখানে সড়কে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে। তরল বর্জ্য চুইয়ে সড়কে জমে অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে।
মীরেরবাজারে সড়কে দুপাশেই লেগুনা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে যানবাহন চলতে বাধা পাচ্ছে। পুবাইল রেলক্রসিংয়ে রেললাইনের উপরে সড়কের বিটুমিন উঠে গিয়ে বিশাল গর্ত হয়ে গেছে। ফলে যানবাহন পার হতে অনেক সময় লাগছে।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ঘোড়াশাল শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতুর টোলপ্লাজা থেকে নাজমুল সিএনজি ফিলিং স্টেশন পর্যন্ত প্রায় দেড়শ মিটার অংশে। সড়ক দেবে গিয়ে অসংখ্য বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। যানবাহন চলছে খুব ধীরে।
সেখানে প্রায়ই যানবাহন আটকে যাচ্ছে, অনেক সময় ট্রাক উল্টে যায় বলে স্থানীয়রা জানান। রোববার সেখানে পাটবোঝাই একটি ট্রাক উল্টে যান চলাচল বন্ধ ছিল কিছু সময়।
এ সড়ক পার হতে অনেক সময় লাগে বলে জানান মহাখালী থেকে সিলেটগামী এনা পরিবহনের চালক মো. আমজাদ হোসেন আকন্দ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভাঙা রাস্তায় যানজট না থাকলেও মহাখালী থেকে পাঁচদোনা পর্যন্ত যেতে ৩ ঘণ্টার মতো লাগে। হালকা যানজট থাকলে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা লাগে।
“ঈদের আগেও যদি এমুন থাকে তাইলে আমাদের কোম্পানিরও লস হইব। আর মানুষ ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে ঈদ করতে পারব না।”
ঘোড়াশালের সড়কের ওই অংশের নিচের মাটির মান খারাপ হওয়ায় সেখানে সড়ক দেবে গেছে বলে জানান নরসিংদী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদের সময় ওই সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হবে না।
“আমরা ইতোমধ্যে ইট, বালি দিয়ে সড়কটি মেরামত করে দিয়েছি। আশা করছি ঈদের আগে আর গাড়ি চলাচলে সমস্যা হবে না।”
তবে বর্ষার এই মৌসুমে বৃষ্টি হলে সড়কের এই সংস্কারে কাজ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান গাড়িচালকরা।