মেঘনা সেতু উঁচু হওয়ায় ভারী যানবাহন উঠতে সময় লাগে বেশি। সেই সঙ্গে টোল আদায়ে সময় বেশি লাগায় এমনিতেই মাঝেমধ্যে গাড়ির জট তৈরি হয়। আর সেতুর নির্মাণ কাজ চলায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলোকে কাচপুরে চলতে হচ্ছে একটি লেইনে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার যানবাহন এই দুটি সেতু পার হয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যায়। ঈদের ছুটি শুরু হলেই ঘরমুখো যাত্রীর চাপে এই সংখ্যা বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।
এর মধ্যে কোনো যানবাহন বিকল হলে তা সরানোর জন্য যথেষ্ট রেকার না থাকায় ঈদযাত্রার মওসুমে যানজট চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কাচপুর হাইওয়ে থানার ওসি শেখ শরীফুল হাসান।
“মূল সমস্যাটা হয় ব্রিজের ওপর কোনো গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে। মেঘনা সেতু দুই লেইনের, তার ওপর আবার অনেক খাড়া। গাড়ি নষ্ট হলে সেটা নামাতে ঘণ্টাখানেক লেগে যায়। আর লোডেড গাড়ি নষ্ট হলে আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। আমাদের রেকারগুলো ২০ টনের। কিন্তু ৪০ টন-৫০ টনের গাড়িও এই রাস্তায় যায়। সেগুলো নষ্ট হলে আমাদের কপালে দুঃখ আছে।”
গত বৃহস্পতিবার ভোরে মেঘনা সেতুর ওপর দুটি কভার্ড ভ্যানের সংঘর্ষ হলে দাউদকান্দি থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত সড়কে দিনভর যানজট চলে।
মেঘনা-গোমতি সেতুর ইজারাদার সিএনএসের কর্মকর্তারা জানান, তাদের টোলপ্লাজায় টোলঘর রয়েছে ছয়টি। প্রতিটি টোলঘর দিয়ে প্রতি মিনিটে প্রায় ছয়টি যানবাহন পার হতে পারে। সে হিসেবে প্রতি মিনিটে প্রায় ৪০টি গাড়ির সেতু পার হওয়ার কথা।
তবে বাস্তবে বেশিরভাগ যানবাহন ১০ সেকেন্ডে টোল শোধ করতে পারে না। বিশেষ করে কভার্ড ভ্যান, ট্রেইলার ও ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে বেশি সময় লেগে যায়।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় টোলঘরে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, একটি ট্রেইলারের টোল নিতে সময় লেগেছে ২৬ সেকেন্ড। আরেকটি কভার্ড ভ্যানের জন্য লেগেছে ৩০ সেকেন্ড।
ঢাকা-ফেনী রুটের চৌদ্দগ্রাম ট্রান্সপোর্টের বাসের চালক আবদুল মতিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অহনই টোল নিতে বেশি সময় লাগে। আর ঈদের আগে ঢাকা থেইকা অনেক গাড়ি যাইব। তহন একটা গাড়ির সময় বেশি লাগলে পিছনের গাড়ি আইটকা যায়। এইভাবে যানজট তৈরি হয়।”
মেঘনা সেতুতে ২০ টনের বেশি ভারী ট্রাক চলার নিয়ম নেই। এর অতিরিক্ত ওজন নিয়ে কোনো যানবাহন ব্রিজস্কেলে উঠে পড়লে তাকে টোলের টাকা ছাড়াও অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হয়। চালকদের কাছে জরিমানার টাকা না থাকলে সেই ট্রাককে পেছন দিকে ফেরত পাঠানো হয়।
শনিবার প্রায় এক ঘণ্টা সময় টোলপ্লাজায় অবস্থান করে কয়েকটি ট্রাককে টোলপ্লাজা থেকে পেছনে ঘুরে আসতে দেখা যায়।
টোলপ্লাজার ক্যাশিয়ারদের একজন শাহ আলম রবি জানান, অনেক সময় চালকরা বড় নোট দেন। ফলে ভাংতি করতে সময় লাগে। এছাড়া সফটওয়্যারের সমস্যা হলেও অনেক সময় জটিলতা বাড়ে।
“শতকরা ৫ ভাগ গাড়ির টোল নেওয়ার সময় সফটওয়্যার ঝামেলা করে। ধরেন, একটা ছোট ট্রাকের টোল ৫৭০ টাকা দেখানোর কথা, কিন্তু মনিটরে দেখালো বড় ট্রাকের টোল ১৫০০ টাকা। তখন সেটা ক্যানসেল করে আবার মেশিন রিস্টার্ট দিতে হয়। ওখানে ১ মিনিটের মত সময় চলে যায়।”
শ্যামলী পরিবহনের চালক সুমন জানান, ঢাকা থেকে গাড়ি ছাড়ার পর মেঘনা সেতুতে যাওয়ার আগেই কাচপুরে একদফা ঝামেলা পার হতে হচ্ছে তাদের। সেতুর নির্মাণকাজ চলায় সেখানে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলোকে একটি লেইনে চলতে হচ্ছে।
ফলে কাচপুর-চিটাগাং রোড এলাকায় দীর্ঘ যানজট লেগে যাচ্ছে মাঝেমধ্যেই। ঈদের আগে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা এই চালকের।
শ্যামলী পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক বিনয় চন্দ্র দাস বলেন, কাঁচপুর ও মেঘনাঘাটের যানজট পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ঈদে যাত্রীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে।
মহাসড়কে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের উল্টোপথে চলার কারণেও যানজট হয় বলে অভিযোগ করেন সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম। ঈদের আগে এ বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেন তিনি।
“প্রাইভেটকারগুলো কে কার আগে যাবে এই প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে যানজট বাড়িয়ে দিচ্ছে। উল্টো দিক দিয়ে যাওয়ায় সামনের গাড়িগুলোর চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটা যদি ঠিক করা যায়, তাহলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাচপুর হাইওয়ে থানার ওসি শরীফুল জানান, কোনো গাড়ি যেন উল্টো দিকে যেতে না পারে সেজন্য দাউদকান্দি সেতু পর্যন্ত সড়কে ইউটার্ন নেওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আর মেঘনা সেতুতে গাড়ির বাড়তি চাপ সামলাতেও ইাতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন সিএনএস লিমিটেডের পরিচালক মো. জিয়াউল আহসান সারোয়ার।
“এখানে একটা রেকার সব সময় থাকে। ঈদের জন্য পুলিশকে একটা বাড়তি রেকার আমরা ভাড়া করে দিয়েছি। ঈদে যাত্রীবাহী গাড়িগুলো সরাসরি যাওয়ার জন্য দুটো লেইন আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। ওই দুই লেইন দিয়ে অন্য কোনো যানবাহন যেতে পারবে না।”
আর ওজন স্কেলের কারণেও সেতুতে বাড়তি সমস্যা হওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।
“চালকদের কাছে জরিমানার টাকা না থাকলে অনেক সময় সমস্যা হয়। তাদের পেছনে ফিরিয়ে আনতে হয়। তখন তাদের বাঁয়ে পার্ক করিয়ে দিই। ঈদের সময় এটা নিয়ে তেমন সমস্যা হবে না বলিই আশা করছি।”