মানিকগঞ্জের এক জ্যেষ্ঠ সহকারী জজের বাড়ি বদলের জন্য রাখা ট্রাকে এক শিশুর হাসপাতালে যাওয়ার পথ আটকানোর প্রতিবাদ করায় শিশুটির মামাসহ দুজনের বিরুদ্ধে ওই বিচারক মামলা করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
Published : 11 Jun 2017, 10:45 PM
শিশুটির মামা স্থানীয় যুবলীগ নেতা সামিউল আলিম রনি এবং মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার অডিট বিভাগের জ্যেষ্ঠ অডিটর মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটির বাদী হয়েছেন আদালতের এক কর্মচারী।
মামলার আসামিরা বলছেন, বাসা বদলের সময় রাস্তা আটকে রাখায় শিশুটিকে হাসপাতালে নিতে ট্রাক সরাতে বললে উল্টো তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়।
অন্যদিকে শুক্রবারের ওই ঘটনার বিষয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলছেন, তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় সেদিন তিনি পুলিশের আশ্রয় নিয়েছিলেন।
মানিকগঞ্জ শহরের রিজার্ভ ট্যাংকি এলাকায় থাকতেন বিচারক মাহবুবুর রহমান, শুক্রবার তিনি ওই বাসা বদল করছিলেন।
ওই এলাকার পুকুর পাশের একটি ভবনের নিচতলায় থাকেন মানিকগঞ্জের দৌলতপুর মতিলাল ডিগ্রি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রেজাউল হক মামুন, তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে হাসপাতালে নেওয়ার সময়ই ঘটে ওই ঘটনা।
শিশুটির মা দীনা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার সারাদিন তার মেয়ে ২০/২১ বার বমি করার পর রাতে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিতে মোটর সাইকেলে বেরিয়েছিলেন তারা।
“একটি ট্রাক বের হওয়ার রাস্তা আটকে ছিল। ট্রাকটি মানিকগঞ্জ আদালতের সহকারী জজ মাহবুবুর রহমান ভাড়া বাসা বদলের মালামাল বহনের জন্য রেখেছিলেন। বলা হয়, যতক্ষণ কাজ শেষ না হবে ততক্ষণ ট্রাক সরানো যাবে না।”
শিশুটিকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বললেও মাহবুবুর রহমান কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ করেন রেজাউল।
এনিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে দীনা আক্তার তার ছোট ভাই, যুবলীগ নেতা রনিকে খবর দেন। তখন রনি ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা আবুল বাশারসহ কয়েকজন এসে মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে ট্রাক সরানো নিয়ে আবারও বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় কর্মরত জ্যেষ্ঠ অডিটর মজিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অসুস্থ শিশুটির মায়ের কান্না শুনে আমি বাসা থেকে নেমেছিলাম। কী হয়েছে জানতে চাইলে সহকারী জজের এক কর্মচারী অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, তখন আমি প্রতিবাদ করেছিলাম।”
সেই কর্মচারীই রোববার তার ও রনির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে মজিবুর জানান।
তিনি বলেন, “দেড় মাস পর চাকরি থেকে অবসর নেব। আমি অসুস্থ বয়স্ক মানুষ, স্ট্রোকের রোগী। ক্ষমতা বোঝাতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হল।”
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি হাবিবুল্লাহ সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুজনের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে আদালতের এক কর্মচারী মামলা করেছেন। ঘটনার সময় বিচারক মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন বলেও এজাহারে বলা হয়েছে।
“ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সব করতে হয়েছে। এখানে এছাড়া করার কিছুই ছিল না।”
মামলার পর এই বিষয়ে কথা বলতে জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে শুক্রবার ঘটনার পর তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমার বাসার সামনে এসে কয়েক যুবক আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। এজন্য তাৎক্ষণিক থানায় ফোন করে পুলিশের সহায়তা চেয়েছি। পুলিশ এগিয়ে না আসলে আমাকে শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হত।”
ওই রাতে পুলিশ এসে রনিকে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়েছিল। রাতভর রাখার পর সকালে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল।
মামলার আসামি মজিবুর বলেন, “সহকারী জজ মাহবুবুর রহমান ওই শিশুটিকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছিল। শিশুটির মা-বাবার সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন।”
শিশুটির মা দীনা আক্তার বলেন, “মাহবুবুর রহমান সাহেব আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন, আমার মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছেন এমন অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলেও পুলিশ সেই অভিযোগ আমলে নিল না।”
রনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমরা অন্যায়ের শিকার হতে চলেছি। যারা ন্যায় বিচার করবেন বলে আশা করি, তারাই এখন অন্যায় করছেন।”
এই বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভিকটিম যদি মনে করে তার সঙ্গে অন্যায় কিছু হয়েছে, তাহলে তিনি জেলা জজ সাহেবকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাতে পারেন। তখন ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।”