শনিবারের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতির আশা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর

চলমান লোড শেডিংকে ‘লোড শেয়ারিং’ বলে আর দুদিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতির আশা দিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2017, 01:53 PM
Updated : 25 May 2017, 03:23 PM

অসহনীয় গরমের সঙ্গে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবনে ভোগান্তির মধ্যে বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি তো বলব লোড শেডিং না, শেয়ারিং করছি।

“কারণ হলো কয়টা দিন যা হয়েছে আমরা লোড শেয়ার করেছি। লোড শেড, বিদ্যুতের জেনারেশনের যদি অবস্থাই না থাকে। সেই অবস্থা থেকে আমরা কিন্তু এক জায়গার লোড আর এক জায়গায় শেয়ার করেছি, স্বাভাবিকভাবে।”

লোড শেডিং ও লোড শেয়ারিং এর মধ্যে পার্থক্য সাংবাদিকরা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী হাসতে হাসতে বলেন, “প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট আর প্রাইস বাড়ার মধ্যে যে পার্থক্য।”

পুরো চাহিদা পূরণ না করায় লোডশেডিং থাকবে কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি বলি কিছুটা লোড শেয়ারিং করতে পারি। এটা রমজানের পরে দেখা যেতে পারে, এখন না।”

গ্রীষ্ম মৌসুমে যখন তাপপ্রবাহে দেশজুড়ে হাঁসফাঁস করছে মানুষ, তার মধ্যে দুয়েকটি শহর বাদে দেশের অধিকাংশ এলাকায় দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।

উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাওয়ার পরও বিদ্যুতের এখনকার সমস্যার জন্য একসঙ্গে কয়েকটি ঘটনার কথা তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “মেঘনা ঘাটে টাওয়ারটি পড়ে যাওয়ার কারণে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট কনজাম্পশন করতে পারছি না বলে হঠাৎ করে এই ঝামেলাগুলো হয়েছে।

“হঠাৎ করে আমাদের বিবিয়ানা, আশুগঞ্জ ও মেঘনা ঘাট শাটডাউন হয়ে গেছে। একাধিক কারণে সার্ভিসিং প্রিয়ড যাচ্ছে। হঠাৎ করে শাটডাউন হওয়ার কারণে প্রবলেমটা যাচ্ছে।”

বেসরকারি খাতের কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রক্ষণাবেক্ষণ কাজও এ পরিস্থিতি তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে বলে জানান নসরুল।

বর্তমানে দৈনিক উৎপাদন ৮ হাজার মেগাওয়াটের উপরে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, শনিবারের মধ্যে গ্যাসের সরবরাহ বেড়ে গেলে এবং রক্ষণাবেক্ষণে থাকা কেন্দ্রগুলো চালু হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

কাফকো, শাহজালাল সার কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সেটার ইফেক্ট আসতে আসতে হয়ত আরও দু’দিন সময় লাগবে। শনিবার দিন হয়ত আমরা পাওয়ারে গ্যাসের অভাব পূরণ করতে পারব।”

রোজায় দৈনিক চাহিদা ১০ হাজার মেগাওয়াটের মতো হবে বলে ধরছেন প্রতিমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, “পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, শনিবারের দিকে ১০ হাজার বিদ্যুৎ দিতে পারব।”

বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের ১২ হাজার মেগাওয়াট পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে বলে দাবি করেন নসরুল।

শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সমস্যা বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের শহরে বিদ্যুৎ খরচ বেশি। সারা বাংলাদেশে গ্রামে এই মুহূর্তে রিকোয়ারমেন্ট মাত্র চার হাজার।

“সারাদেশে যে বিদ্যুৎ গোটা ঢাকা একাই ফিফটি পার্সেন্ট এবং বাকি ফিফটি পার্সেন্ট টোটাল বাংলাদেশ। দেশের বাকি শহর চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা বাদ দিলে সারা দেশের মাত্র ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ গ্রামাঞ্চলে যায়। একারণে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের ঘাটতিটা বেশি দেখা গেছে।”

শপিংমল বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সীমিত বিদ্যুত ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে তারাবি এবং ইফতারের সময় তারা শপিংমল এবং বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে আমাদের আরও বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।

“বিশেষ করে বৃহৎ শিল্প স্টিল রি-রোরিং মিলগুলোকে, আশা করব পিক আওয়ারে যেন তারা বন্ধ রাখে। আমরা ইন্ডাস্ট্রি লোডটাকে রি-শিফটিং করব।”

প্রতিমাসে প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ যোগ হলেও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কথাও বলেন নসরুল।

শহরে ২০ শতাংশ এবং গ্রামে ১৫ শতাংশ চাহিদা বেড়ে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, “যেভাবে বাড়ছে, দেখা যাবে ৩০ হাজার চাহিদা। এখন চিন্তা করছি আরও কিছু বড় পাওয়ার প্লান্ট আগামী ৩/৪ বছরে কীভাবে আনা যায়।

“কোল পাওয়ার প্ল্যান্টে সময় লাগছে। কয়লার যে ১০ হাজার মেগাওয়াট আসার কথা ছিল সেখানে সাড়ে তিন হাজার। এ কারণে হয়তো এলএনজিতে যাব, আগামী বছর জুন থেকে।”