ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে ২৪ দিন আগে অপহৃত পাঁচ বছরের সুমাইয়াকে পুলিশ যখন তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিল, মা-মেয়ের কান্না যেন আর থামতে চাইছিল না।
Published : 27 Apr 2017, 04:47 PM
কাঁদছিলেন সুমাইয়ার বাবাও। শিশুটিকে উদ্ধার করা পুলিশ সদস্যরাও এ সময় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।
বুধবার গভীর রাতে ঢাকার জুরাইনের এক বাসা থেকে সুমাইয়াকে উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচজনকে, যাদের মধ্যে সুমাইয়াদের এক সময়ের প্রতিবেশী সাবিনা আক্তার বৃষ্টিও ছিলেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সুমাইয়া ও তার মা-বাবাকে ঢাকার মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে নিয়ে আসা হলে আনন্দ-বেদনায় পুনর্মিলনের সেই দৃশ্য সাংবাদিকদেরও স্পর্শ করে।
সুমাইয়া কিছুক্ষণ পরপরই মাকে বলছিল,“মা, চুমু দেও আমাকে।”
চোখে অশ্রু, মুখে হাসি নিয়ে মেয়েকে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছিলেন মা মুন্নি বেগম।
আদরে সিক্ত হতে হতে সুমাইয়া তার মাকে বলে, “আমি তোমাদের জন্য অনেক কেঁদেছি। কিন্তু বৃষ্টি আমাকে মেরেছে।”
আটকে থাকার দিনগুলোতে বৃষ্টিকে মা বলে ডাকার জন্য জোর করা হত বলে জানায় মেয়েটি।
সুমাইয়ার কথা শুনে ফের ডুকরে কেঁদে ওঠেন তার মা-বাবা।
কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি মো. শাহীন ফকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডকটমকে বলেন, “ভোরে যখন সুমাইয়াকে মা-বাবার কোলে তুলে দেওয়া হল, তখন তারা কাঁদছিলেন। এখন তো অনেকটা স্বাভাবিক।”
ওসি বলেন, এ ঘটনার ‘মূল আসামি’ সাবিনা আক্তার বৃষ্টি ও তার বাবা সিরাজ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া, এই ঘটনায় আরও তিনজন আটক রয়েছেন। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
সেদিন কীভাবে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই বিবরণও সাংবাদিকদের সামনে দেয় সুমাইয়া।
সে বলে, “বৃষ্টি আগেও আমাদের বাসায় এসেছে। প্রায়ই আমাকে তার বাসায় নিতে চাইত। ওইদিন বিকেলে বৃষ্টি আমাদের বাসায় আসলো। মা ঘরে ছিল। পরে আমাকে হাত ধরে রাস্তায় নিয়ে গেল।”
চিৎকার দিলে না কেন- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে সুমাইয়া বলে, “দিতে তো চাইছিলাম, কিন্তু আমাকে রিকশায় তুলে চেপে ধরে রাখছিল।”
সংবাদ সম্মেলনে বৃষ্টিকে কোনো কথা বলতে দেওয়া হয়নি। বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিডিনিউজ টোয়োন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নেরও কোনো উত্তর তিনি দেননি।
কেন সুমাইয়াকে অপহরণ করা হল- এ প্রশ্নে সুমাইয়ার বাবা জাকির হোসেনও কোনো ধারণা দিতে পারেননি।
তিনি বলেন, “বৃষ্টিকে আমি আগে একবার দেখেছিলাম। কিন্তু তার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।”
মা মুন্নি বেগম বলেন, “ওইদিন বিকালে বৃষ্টি আমাদের বাসায় এসে বলে, বাড়িওয়ালার সঙ্গে দেখা করবে। সে আমাদের বারান্দায় ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখি সে নাই, সুমাইয়াও নাই।”
গত ৩ এপ্রিল বিকাল ৫টার দিকে কামরাঙ্গীরচরের বড়গ্রামে বাসার সামনের রাস্তা থেকে নিখোঁজ হয় স্থানীয় একটি কারখানার কর্মী জাকিরের মেয়ে সুমাইয়া।
ওইদিনই থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন জাকির। এরপর গত সোমবার তিনি কামরাঙ্গীরচর থানায় অপহরণের মামলা করেন।
বড়গ্রামে জাকিরের বাসার তিন বাড়ি পরেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার মোহাম্মদ হোসেনের বাসা। ওই বাড়ির সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে কালো বোরকা পরা এক নারীকে শিশুটির হাত ধরে হেঁটে যেতে দেখা যায়।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান বলেন, “কী কারণে বৃষ্টি শিশুটিকে নিয়ে গিয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। বৃষ্টি কয়েকবার ভারতে গিয়েছিলেন। তিনি মানবপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত কিনা- তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
গ্রেপ্তার সাবিনা আক্তার বৃষ্টি ও সিরাজ মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।