এবারের ভারত সফরে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাড়া না পেলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আশ্বাসে ধৈর্য ধরতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 11 Apr 2017, 08:24 PM
তিনি বলেছেন, “আমি একটি জিনিস বিশ্বাস করি, আমরা তো আছি ডাউনস্ট্রিমে। পানি আসবে, পানি কেউ আটকে রাখতে পারবে না।”
ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।
ছয় বছর আগে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে এখনও তা আটকে আছে।
শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরে ৮ এপ্রিল দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকের সময় মমতাকে ডেকে নিয়ে তিস্তার প্রসঙ্গ তোলেন মোদী। কিন্তু তাতেও অগ্রগতির কোনো তথ্য আসেনি।
নরেন্দ্র মোদী পরে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান সরকারের সময়েই তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধানে পৌঁছনো সম্ভব হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
ওইদিন সন্ধ্যায় মমতা দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি বিকল্প প্রস্তাব দেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের কিছু ছোট ছোট নদী আছে। যেগুলো জীবনে কখনো নার্চার হয়নি। এবং যেগুলো দিয়ে বাংলাদেশে একটা কানেকশনও আছে। সেখানে যদি আমরা দুটো দেশ স্টাডি করে কোনো ভায়াবিলিটি দেখতে পাই, তাহলে কিছুটা কিছুটা আমরা শেয়ার করতে পারি।”
“তার মানে এটা একটা দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে যাবে। তবে প্রাইম মিনিস্টার নরেন্দ্র মোদী খুব স্পষ্টভাবে বলেছেন, তিস্তার পানিচুক্তি হবেই। এবং তিনি ক্ষমতায় থাকতে আমি ক্ষমতায় থাকতে হবে- এটাও তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি যখন ঘোষণাটা দিয়েছেন, স্বাভাবিকভাবেই আমরা ধৈর্য ধরতে পারি।”
চুক্তি হওয়ার আগে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পানি সংরক্ষণ ও তা কাজে লাগানোর ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র খনন করে বর্ষাকালে আসা পানি ধরে রাখা এবং শুষ্ক মৌসুমে তা কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে পদক্ষেপ নিজেদেরই নিতে হবে।
“ওই পানি দাও পানি দাও বলে চিৎকার না করে… যেহেতু পানি তাদের ছাড়তেই হবে, যখনই বেশি বৃষ্টি হবে পানি না ছেড়ে পারবে না। কাজেই আমাদেরও পানি ধরে রাখার ব্যবস্থাটা আমরা করব।”
তিস্তায় চুক্তি না করে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রির যে প্রস্তাব মমতা দিয়েছেন, সে বিষয়েও সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমি তো তাকে ঠাট্টা করে বলেছি, দিদি মনিতো আমাদের একেবারে খালি হাতে ফেরত দেয়নি, আমি পানি চেয়েছি, আমাকে বিদ্যুৎ দিয়েছে। তাহলে বিদ্যুৎ কিনতে পারব এখন। কিছু তো পেলাম! খালি আতে আসিনি। বিদ্যুৎ তো আমাদের খুব দরকার।”
“উনি যে বিকল্প নদীর কথা বলেছেন, সেখানে আমি তাকে আবার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছি। যে এই নদীর পানি না এনে তার ওখানে ওই নদীর পানিগুলি উনি তিস্তায় নিয়ে তিস্তা থেকে আমাদের পানি দিক।… তবে উনি বলছেন, এটা স্টাডি করতে হবে।”
ভারত যখন তিস্তায় বাঁধ দিয়েছিল, তখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়নি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “
“গজলডোবায় বাঁধ যখন করা হয়, সেখানে আমাদের বাংলাদেশের পক্ষে থেকে যারা ক্ষমতায় ছিল, তাদের কথা বলা উচিৎ ছিল। তখন কেন তারা এ ব্যাপারে কোনো কথা বলে নাই?”
বাংলাদেশ সীমান্তের ৬০ কিলোমিটার উজানে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবায় তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশে ওই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয় গত শতকের শেষভাগে। এর মাধ্যমে তিস্তার পানি তিস্তা-মহানন্দা খালে সরিয়ে নিয়ে কয়েকটি জেলায় সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভারত ওই ব্যারেজের পরিকল্পনা করছিল পাকিস্তান আমলে থেকে। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও কোনো সরকার এ নিয়ে কথা বলেনি।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আজকে যারা চিৎকার করে গলা ফাটাচ্ছে, তারা টু শব্দটি করেনি কেন?”
বাংলাদেশ অংশে তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণকে আরেকটি ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, “এর ফলাফলটা আমরা ভোগ করছি।”