চার সহকর্মীর সাজার প্রতিবাদে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আরও কয়েকটি হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে সমর্থন জানিয়ে একই কর্মসূচি শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
Published : 05 Mar 2017, 03:51 PM
এদিকে রোববার বগুড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের টিকেট করতে দেওয়া হয়নি বেলা ১২টা পর্যন্ত। শিক্ষানবিশদের কর্মবিরতিতে গত কয়েকদিন ধরেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।
সিরাজগঞ্জ সদর থেকে বগুড়া হাসপাতালে এক রোগীর ছেলে ও দুই মেয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধরের শিকার হলে ঘটনার সূত্রপাত। এ ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পর ২ ফেব্রুয়ারি চার ইন্টার্ন চিকিৎসককে শাস্তির ঘোষণা আসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে।
শাস্তি হিসেবে চারজনের ইন্টার্নশিপ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। ছয় মাস পরে তাদের চারজনকে অন্য চারটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করতে বলা হয়।
বগুড়া মেডিকেলের বহির্বিভাগ বন্ধ আধাবেলা
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিশরা চতুর্থ দিনের মতো কাজ বন্ধ রেখে মানববন্ধন ও মিছিল করেছেন।
বহির্বিভাগে আসা রোগীদের বেলা ১২টা পর্যন্ত টিকেট কাটতে না দেওয়ায় সেখানেও ওই সময়ের আগে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিভাগে সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত রোগী দেখা হয়।
রোববার সকাল ১০টা থেকে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন ও মিছিল করেন। প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন হয়।বেলা ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে মেডিকেল কলেজের দিকে যান তারা।
মানববন্ধনের সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হাসপাতালের বহির্বিভাগ বেলা ১২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। এ সময় তারা কলেজের ক্লাস এক ঘণ্টা বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ একেএম আহসান হাবীবের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।
মানববন্ধন থেকে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের মুখপাত্র শাস্তি পাওয়া কুতুব উদ্দিন বলেন,“শাস্তি দিলে দুপক্ষকেই দেওয়া উচিত। একটি বিশেষ এলাকার লোক হওয়ায় রোগীর স্বজনদের ছাড় দেওয়া হয়েছে।”
তদন্ত কমিটি মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছে দাবি করে শাস্তি প্রত্যাহারসহ তাদের সকল দাবি না মানলে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার হঁশিয়ারি দেন তিনি।
তবে কর্মবিরতির ফলে সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজন ভোগান্তির কথা বললেও চিকিৎসা সেবায় কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক নির্মূলেন্দু চৌধুরী বলেন,“হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসা কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।”
কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে সেবা দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন,বহির্বিভাগে একঘণ্টা চিকিৎসা সেবা বন্ধ ছিল। তবে পরে যথারীতি চিকিৎসা সেবা শুরু হয়।
জরুরি বিভাগের ইনচার্জ মাইকেল ডেভিড জানান,হাসপাতালে নিয়মিত রোগী ভর্তি চলছে। জরুরি বিভাগে ১ মার্চ ১৫৩ জন,২ মার্চ ১৫৪ জন ও ৪ মার্চ ২২৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শরিফুল রেজোয়ান জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা না থাকায় অন্যদের অতিরিক্ত সময় দিতে হচ্ছে হাসপাতালে।
রোববার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শুরু হয় বেলা ১২টা থেকে।
হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. রাশেদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুপুর ১২টা থেকে আমরা কর্মবিরতি শুরু করেছি।
রাশেদ বলেন, “বগুড়া মেডিকেল কলেজের আমাদের যে চার সহকর্মীকে শাস্তি দেয়া হয়েছে সেটা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা ও কর্মস্থলে সম্মানজনক নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে।”
রোববার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করলেও শনিবার থেকে তাদের তিনদিনের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে বলে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন।
কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনে সকালে হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। পরে মিছিল ও দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত মানববন্ধন করেন তারা।
কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কেন্দ্রিয় কর্মসূচির অংশ হিসেবেই তারা তিনদিনের কর্মবিরতি পালন করছেন। এর মধ্যে তাদের দাবি পূরণ করা না হলে পরবর্তীতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এদিকে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় কিছুটা সমস্যা হলেও ভর্তি রোগীরা শরীফা খাতুন ও আসমা আক্তার জানান, আগের মতই চিকিৎসকরা তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছেনা তাদের।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার জানান, কর্মবিরতি কোনো প্রভাব ফেলেনি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায়। চিকিৎসকরা যথাসাধ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।